চান্দুর লোভে প্রাণ যায় ২৬ জনের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১১, ২০২১, ০৩:০৪ পিএম

ঢাকা : অধিক লাভের আশায় লকডাউনের মধ্যেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোটে করে যাত্রী পারাপার অব্যাহত রেখেছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া চান মিয়া ওরফে চান্দু মোল্লা ওরফে চান্দু। তবে মাওয়া ঘাটে দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোটসহ তার মালিকানাধীন তিনটি স্পিডবোটের একটিরও বৈধ কোনো কাগজপত্র বা অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

রোববার (৯ মে) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।  গত ৩ মে মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে নোঙর করে থাকা বালুবোঝাই বাল্কহেডের ওপর আছড়ে পড়ে দুর্ঘটনায় ২৬ জন যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় ৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৪ মে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে রোববার (৯ মে) প্রথম প্রহরে ২টা ৩০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার তেঘড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি স্পিডবোটের মালিক চান্দুকে (৪০) আটক করে র‍্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় চান্দু স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার অব্যাহত রেখেছিলেন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চান্দু বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, দুর্ঘটনার শিকার ওই স্পিডবোটের ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়েছিল। এ ছাড়া স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি ছিল।

গ্রেপ্তার জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরো জেনেছি, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে তারা অবৈধভাবে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করত। ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট পারাপার করার বিষয়ে যাত্রীদেরও উৎসাহ ছিল।

তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, আসামি চান মিয়া ওরফে চান্দু ৫ বছর ধরে স্পিডবোটের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের ব্যবসার করে আসছিল। তার তিনটি স্পিডবোটের কোনোটির অনুমোদন ছিল না। দুর্ঘটনার পরপরই আসামি চান্দু আত্মগোপনে চলে যান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, এ মামলায় চারজন আসামি। প্রধান আসামির চালক তিনি পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাসপাতালে। মামলার বাকি দুই আসামি ইজারাদার আরেকজন পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  অবৈধভাবে যারা স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাওয়া ও দোলোদিয়া ফেরিঘাট স্পিডবোট ব্যবসা পরিচালিত হয় তা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিআইডব্লিটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, জেলা প্রশাসক, ঘাট ইজারাদার ও মালিক সমিতির সম্মানিত তত্ত্বাবধায়নে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে অবশ্যই যদি দেখে কোনো অনুমোদনহীন বোর্ড নদী পারাপার করছে যাত্রীদের তাহলে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনকে লুকিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করত। সাধারণ সময়ে তারা যাত্রী পারাপারের ১৫০ টাকা করে নিলেও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের সময় তারা ২০০-৩০০ টাকা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।  

স্পিডবোটে ২০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও এ দুর্ঘটনায় আমরা দেখেছি ৩২ জন যাত্রী ছিল। তবে এ ক্ষেত্রে ঘাট ইজারাদার ও ঘাট মালিক সমিতির গাফিলতি লক্ষ করা যায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই