জানাজা-জুমার নামাজে মোবাইল চুরি করত চক্রটি 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ০৩:৫৯ পিএম

ঢাকা: জানাজা ও জুমার নামাজকে কেন্দ্রকে মোবাইল চুরি চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত এটিইউর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।

এর আগে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর চাঁনখার পুল, জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজা, জুরাইন বুড়িগঙ্গা সেতুমার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, মো.বাহাউদ্দিন হোসেন মিজি ওরফে বাহার (৩৫), রমজান আলী (২৯), মো. হামিম আহমেদ ওরফে হামিম (৩৪), মো. আতিকুল ইসলাম (২৮), মো. পারভেজ হাসান (১৮), মো. মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ (৩২), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো.ফয়সাল আহমেদ রনি (৩৪) ও মো.মিল্লাত হোসেন (২৬)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ল্যাপটপ, ১টি মনিটর, ১টি রেডমি নোট-১২ প্রোসহ ৭টি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সামগ্রী ও মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ১৬টি ডিভাইস জব্দ করা।

পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিল এবং মানুষের জানাজার নামাজসহ জনসমাগমস্থল থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে। এরপর চোরাই মোবাইল সেটের আইএমইআই পরিবর্তন করে কেনা-বেচা করে থাকে। চক্রটির সদস্যরা অনলাইনের সাহায্যে খোঁজতে থাকে ঢাকা ও এর আশপাশে কোনো জানাজা আছে কিনা। কোনো জানাজার সন্ধান পাওয়ার পর, তারা খোঁজ খবর নিতে থাকে সেখানে কেমন মানুষের সমাগম হতে পারে। এই কাজের কোড নাম দেয় ‘বডিকাজ’। ‘বডিকাজ’ বলতে তারা বুঝায় লাশের কাজ, মানে জানাজার কাজ। জানাজার স্থান নির্ধারণ হওয়ার পর তারা সেখানে পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরে যায়। সেখানে গিয়ে তারা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রত্যেকটি গ্রুপে তিনজন করে সদস্য থাকে।

তিনি বলেন, এই গ্রুপের সদস্যরা জানাজার ভিড়ের মধ্যে কৌশলে একজনের পকেটে থেকে মোবাইল চুরি করে গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্যকে দেয়। দ্বিতীয় সদস্য মোবাইলটি আবার তৃতীয় আরেকজনকে দেয়। মোবাইল হাতে পাওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি জানাজার স্থান ছেড়ে চলে যায়। পকেট থেকে মোবাইলটি যে চুরি করে নিয়ে আসে তাকে বলা হয় মহাজন। জানাজা ছাড়াও চক্রটির টার্গেটে থাকত শুক্রবারের জুমার নামাজ।

এটিইউর পুলিশ সুপার বলেন, শুক্রবার যেসব মসজিদে বেশি মানুষ জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন, সেসব মসজিদে চক্রটির সদস্যরা তিনজনের গ্রুপ করে অবস্থান নিত। জুমার নামাজের কাতারে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে একই কায়দায় মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় তারা। মসজিদের এই চুরিকে তারা ‘মসজিদ কাম’ বলে থাকে। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে চক্রটির সব থেকে বেশি গ্রুপ সক্রিয় থাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে।

মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, চক্রের সদস্য বাহার চোরাই মোবাইল গ্রুপগুলোতে থেকে সংগ্রহ করত। বাহারের একজন মোটরসাইকেল চালক আছে। যে বাহারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রুপগুলো থেকে মোবাইল সংগ্রহ করে। বাহার পরে মোবাইলগুলো গ্রেপ্তার মাসুদের কাছে পাঠিয়ে দিত। গ্রেপ্তার মাসুদের কাজ হচ্ছে চোরাই মোবাইলগুলো নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে দেওয়া। তদন্তে এমন তিনটি দোকানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দোকানগুলো হলো, জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার এসআই টেলিকম যার মালিক গ্রেপ্তার সাইফুল, জুরাইনের সেতু মার্কেটের ফয়সাল টেলিকম যার মালিক গ্রেপ্তার ফয়সাল ও যমুনা ফিউচার পার্কের চতুর্থ তলার একটি দোকান যার মালিক গ্রেপ্তার মিল্লাত।

তিনি বলেন, এ দোকানগুলোতে চলত টেকনিক্যাল ও মোবাইল বিক্রির কাজ। প্রথমে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা হতো। তারপর মোবাইলগুলোর প্যাটার্ন লক খোলা হতো। সর্বশেষ মোবাইল থেকে ল্যাপটপের মাধ্যমে ফ্লাশ দিয়ে বিক্রি করা হতো।

আইএ