গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর প্রতারণায় নিঃস্ব পদ্মা সেতুর পাথর সাপ্লায়ার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম

ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। ভাই-ভাই ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধীকার আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে পাথর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। দেশের আলোচিত প্রকল্প পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজে পাথর সরবরাহ করে পুরস্কার পাওয়া আমিনুল নিজেই এবার গার্মেনস ব্যবসায়ীর প্রতারণায় পথে বসে গেছেন। দেশের বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পে সুনামের সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী সরবারহ করা আমিনুল এখন ব্যবসার চিন্তা বাদ দিয়ে আদালতে ঘুরছেন প্রতিকারের আশায়। 

প্রতারণার মূল মাস্টার মাইন্ড অ্যাস্ট্রোটেক্স গ্রুপ নামের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আসাদুল ইসলাম ও তার সহযোগী আমির হোসাইন। যাদের নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালত ইতো মধ্যে প্রতারণা ও স্বাক্ষর জালের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে যৌথ ভাবে বিদেশ থেকে পাথর আমদানির ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীর ফাঁদে পরেছেন আমিনুল। একই বছর ভুক্তভোগী আমিনুলকে নিয়ে গার্মেন্স ব্যবসায়ী মো. আসাদুল ইসলাম ও তার সহযোগী মো. আমির হোসাইনেকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় স্ট্যন্ডার্ড হোলিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন মো. আসাদুল ইসলাম ও তার সহযোগী আমির হোসাইনকে করা হয় পরিচালক। আসাদুল ও আমিরের সুনিপুন প্রতারণার স্বীকার হয়ে ব্যবসার মূলধনই হারিয়ে ফেলেছেন আমিনুল। পাথর আমদানির নামে ব্যাংকে জমা থাকা প্রায় ১৪ কোটি টাকার সবই আমিনুলের চেক ও স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেন তারা। এই ঘটনায় মামলা করেন আমিনুল। এরপর সেই মামলা থেকে বাঁচতে আবারও প্রতারণার আশ্রয় নেন আসাদুল। ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মামলা থেকে বাঁচতে আসাদুল মিমাংসার চুক্তি করেন। যেখানে সকল হিসেব তুলে ধরে উল্টো ভুক্তভোগী আমিনুলের কাছে আরও ৫ কোটি টাকা পাওয়া আছেন এমন একটি হিসেবে দাখিল করেন। যে চুক্তির কথা আমিনুল জানেন না। এই চুক্তি দেখিয়ে আদালত থেকে আরও পাঁচ কোটি টাকা আদায়ের আদেশ জারি করিয়ে নেন। এর প্রতিকার চেয়ে আদালতে অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন আমিনুল। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আর এই সিআইডির তদন্তে বেড়িয়ে আসে গার্মেনস ব্যবসায়ী আসাদুল ও তার সহযোগি আমিরের প্রতারণার বিষয়টি। 

সম্প্রতি দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান।

আদালত সূত্রে পাওয়া সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার যৌথ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান স্ট্যন্ডার্ড হোলিং লিমিটেডে ১৪ কোটি ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯ টাকা বিনিয়োগ করেন। এই টাকা যৌথ ব্যাংক হিসেবে থেকে স্বাক্ষর জাল করে আসামি আসাদুল ও আমির বিভিন্ন ভাবে তুলে নেন।  এবার টাকা ফেরত চেয়ে আদালতে মামলা করেন। আর এই মামলা থেকে বাঁচতে আসামিরা মামলা আপোষ করার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সালিশির জন্য আরবিট্রেটর নিয়োগের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে মামলার ভুক্তভোগী রাজি হলে আরবিট্রেটর সালিশে বিচারকদের সামনে বানোয়াট হিসাব বিবারণ উপস্থাপন করেন দুই প্রতারক। এই হিসাব দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে রায় নেন তারা। পরবর্তীতে জাল হিসেবের বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমিনুল।  পরবর্তীতে ২০২৩ সালে আদালত সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন। 

দীর্ঘ তদন্তে সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ফরেন্সিক রিপোর্টে মামলার বাদীর স্বাক্ষর জাল করে নতুন হিসাব বিবরণ ও টাকা তুলে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত চলতি বছরের গত ৩০ জানুয়ারি মামলার দুই আসামি আসাদুল ও আমিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে পলাতক দুই আসামি। 

ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ারে এমন বিপদে কখনো পড়িনি। ভালো ব্যবহার দেখিয়ে তারা আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তবে সিআইডির অত্যান্ত দক্ষতার সঙ্গে করা তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। ধারে ধারে ঘুরে সঠিক বিচার পাই নি। এবার সিআইডি আমাকে বেঁচে থাকার সাহস জোগালো।

এমএস