করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারি পাবেন নগদ সহায়তা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২০, ০৩:৩৬ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ডেইরি ও পোলট্রি খাতের মোট ৬ লাখ ২০ হাজার ক্ষুদ্র খামারিকে নগদ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংকের লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি)। এর মাধ্যমে যাতে তারা করোনার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন ঠিক রাখতে পারে। 

এ জন্য দেশের প্রত্যেকটি উপজেলাতে ইউএনওকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) প্রধান করে এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা তৈরি করছে। তালিকা চূড়ান্ত হলে বিশ্বব্যাংক এই সহায়তার অর্থ ছাড় করবে। সহায়তার টাকা খামারিদের মাঝে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। সোমবার প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অধিদফতর সূত্র থেকে জানায়, এলডিডিপি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। তখন দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করে। এর আওতায় সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ৮১৬ কোটি টাকার (৯৬ মিলিয়ন ডলার) একটি ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। যে টাকার বেশিরভাগই করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র খামারিদের নগদ সহায়তা প্রদানে খরচ করা হবে। 

এছাড়া এই ঋণের টাকার একটি অংশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা ও গবাদিপশুর মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর মতো ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে প্রচারণা চালানো হবে। আর করোনাকালীন সময়ে স্থানীয়ভাবে পোলট্রি ও দুগ্ধ খামারিরা সমন্বিতভাবে গাড়ি ভাড়া করে ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থায় দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করছে। এই গাড়িগুলোর ভাড়াও খামারিরা নিজরাই বহন করত। তাই ঋণের টাকা থেকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের গাড়ি ভাড়াও পরিশোধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় চিলিং সেন্টার, দুধ দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করার অত্যাধুনিক মেশিন ক্রয় করা হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর মো. গোলাম রাব্বানি বলেন, করোনার এই সময়ে এলডিডিপি প্রজেক্টের আওতায় বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তা দিয়ে ডেইরি ও পোলট্রি খাতের উন্নয়নে কয়েকটি কাজ করা হবে। এর একটি অংশ দিয়ে খামারিদের নগদ সহায়তা প্রদান করা। যাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা তাদের কাজটা চালিয়ে নিতে পারেন।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের কত টাকা করে দেয়া হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নগদ সহায়তা দিতে খামারিদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে প্রত্যেকে কত টাকা করে পাবেন, সে বিষয়ে পরে জানানো হবে।

সূত্র আরো জানায়, করোনার থাবায় খামারিদের উৎপাদিত দুধ ও পোলট্রি পণ্য বিক্রি করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সাধারণ ছুটিতে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ায় খামারিরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনতে হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা যাতে ব্যবসা একেবারে বন্ধ করে না দেয় তার জন্য কিছুটা পুঁজির জোগান দেয়ার চিন্তা থেকেই এই সহায়তা দেয়া হবে। এর মধ্যে ডেইরির ৪ লাখ ২০ হাজার এবং পোলট্রি খাতের ২ লাখ খামারিকে নগদ সহায়তা দেয়া হবে। এই টাকা খামারিদেরকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই বিতরণ করা হবে।

এছাড়া পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) এক হিসাবে দেখা যায়, মার্চের ২৬ তারিখ থেকে শুরু করে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়েই ডিম ও মাংস উৎপাদনকারী খামারিদের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি, যা শুধুমাত্র উৎপাদিত মাংস ও ডিম ঠিকমতো বাজারজাত করতে না পারার কারণেই এই ক্ষতি হয়েছে। 

সংগঠনটির আরেক হিসাব বলছে, এপ্রিল মাসে ব্রয়লার মুরগির মাংসের গড় উৎপাদন দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। একইভাবে দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও দুধ বিক্রি করতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করেছেন। কারণ করোনার সংক্রমণের শুরুর দিকে দুধ প্রসেস করা কোম্পানিগুলো দুধ কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, আমরা চাই ক্ষুদ্র খামারিরা ব্যবসায় টিকে থাকুক। না হলে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন কমে যাবে। এজন্য তাদেরকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ