আবারও বেড়েছে আলুর দাম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২০, ১২:১৭ পিএম

ঢাকা: এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া গোল আলুর দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। কোনো কোনো বাজারে গোল আলুর কেজি ৩৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে ৩০ শতাংশের ওপরে এবং বছরের ব্যবধানে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে গোল আলুর দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোল আলু এমন একটি পণ্য যা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার ডাল জাতীয় পণ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এমনকি সব ধরনের মাছ, মাংস ও সবজি রান্নার ক্ষেত্রেও গোল আলু ব্যবহার হয়। ফলে সারা বছর গোল আলুর চাহিদা থাকে। কিন্তু বছরব্যাপী চাষ হয় না।

তারা বলছেন, গোল আলু এখন আর চাষিদের কাছে নেই। সব বড় বড় ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের কাছে চলে গেছে। এসব ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের ওপরই এখন গোল আলুর দাম নির্ভর করছে। তারা চাইলেই বাজারে সংকট তৈরি করতে পারেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন আলুর যে পরিমাণ চাহিদা আছে, সরবরাহ তার তুলনায় কম। এ কারণে দাম বাড়ছে।

বুধবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাজার ও মানভেদে গোল আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দুদিন আগেও গোল আলুর কেজি ২৭ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে ছিল। আর রোজার ঈদের আগে ১৮ থেকে ২২ টাকা কেজি বিক্রি হয় গোল আলু।

মানভেদে দামের পার্থক্য থাকার পাশাপাশি একই মানের গোল আলু বাজারভেদে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যে মানের গোল আলু মালিবাগ হাজীপাড়ায় ৩২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, তা রামপুরা বাজারে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৩৭ টাকা কেজিও বিক্রি করছেন। একই চিত্র দেখা যায় খিলগাঁও তালতলা ও মালিবাগ বাজারে।

এদিকে গোল আলুর দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবি জানিয়েছে, খুচরা পর্যায়ে গোল আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মাধ্যমে এক সপ্তাহে গোল আলুর দাম বেড়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে ৩০ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।

গতবছরের একই সময়ে প্রতি কেজি গোল আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে টিসিবি। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই বছরের ব্যবধানে গোল আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা বেশি।

হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘হুট করে আলুর দাম বেড়ে গেছে। গতকাল দুই বস্তা আলু এনেছি। এ আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেশি পড়েছে। আগের আনা আলু পরশুদিনও ২৭ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আড়ত থেকে বেশি দামে কেনায় এখন সেই মানের আলু ৩২ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সারা বছর গোল আলুর চাহিদা থাকে। কিন্তু চাষ সারা বছর হয় না। যে কারণে বাজারে ভরপুর নতুন আলু থাকলে দাম কম থাকে। এরপর আস্তে আস্তে আলু মজুতেরি দিকে চলে গেলে দাম বেড়ে যায়। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার আলুর দাম তাড়াতাড়ি বেড়েছে এবং দাম বৃদ্ধির হার বেশি।’

খিলগাঁওয়ে ৩৭ টাকা কেজি গোল আলু বিক্রি করা জামাল বলেন, ‘এই আলু বাছাই করা। একটা আলুতেও কোনো ধরনের খুঁত পাওয়া যাবে না। এ কারণে দাম একটু বেশি। অবাছাই করা আলু আছে। ওই আলু ৩২ টাকা কেজি নিতে পারবেন।’

হঠাৎ আলুর দাম বেশি হওয়ায় কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আড়তে দাম বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগের তুলনায় প্রতি কেজি আলু ৩-৪ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি। এখন যে আলু ৩৭ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, দুদিন আগেও তা ৩২ টাকায় বিক্রি করেছি।’

রামপুরার ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, ‘নভেম্বর মাস থেকেই বাজারে নতুন আলু আসতে থাকে। প্রথমদিকে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি থাকে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে গোল আলু বাজারে চলে আসে। ফলে তখন দামও কমে। সুতরাং আলুর দাম সহসা কমার সম্ভাবনা খুব কম। বরং এখন দিন যত যাবে আলুর দাম তত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন আলু আসার পর আগামী বছর দাম কমতে পারে।’

সোনালীনিউজ/টিআই