ঋণ নেওয়ার এখনই সময়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২০, ০১:২৮ পিএম

ঢাকা : দীর্ঘদিন ধরে ঋণ বিতরণ না করার কারণে ব্যাংকে এখন প্রচুর টাকা জমে গেছে। চলতি বছরের জুন শেষে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে (গত এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে) অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে ব্যাংকের হাতে তারল্য বেড়ে গেছে। এছাড়া মহামারির মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি ও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে গতি আসাও তারল্য বাড়াতে সহায়তা করেছে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে ব্যাংকে তারল্য বেড়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরলে ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ না হওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে গেছে।

করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় বিভিন্ন খাতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এই প্রণোদনা প্যাকেজের ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন এবং বিদ্যমান তহবিলের আকার বাড়ানো হয়েছে। এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকার মতো তহবিলের জোগান পাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

এছাড়া ব্যাংকের কাছে নগদ জমা (সিআরআর) দুই দফায় দেড় শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা নতুন করে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া ব্যাংকের তারল্য বাড়াতে তিন দফায় রেপো রেট কমিয়ে ৪.৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে এক বছর মেয়াদি বিশেষ রেপো। ১৭ বছর পর ব্যাংক রেট ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ব্যাংকের মুনাফা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর টাকা জমা হয়েছে। অবশ্য গত জুলাই মাস থেকে প্রণোদনার ঋণ ব্যাপকভাবে বিতরণ শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, জুলাই থেকে প্রণোদনার ঋণ ব্যাপকভাবে বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়া আমদানিও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ফলে অর্থনীতি সচল হলে ব্যাংকের হাতে থাকা অতিরিক্ত তারল্য কাজে লেগে যাবে।

এদিকে করোনার শুরুতে নিম্নমুখী হয়ে পড়া আমানতের প্রবৃদ্ধিও এখন বাড়ছে। জুন পর্যন্ত আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহও বেড়েছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে নিয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ নগদ টাকা ব্যাংকের হাতে এসেছে।

নিয়ম অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়। এই নিয়মে গত জুন পর্যন্ত তাদের রাখার প্রয়োজন ছিল এক লাখ ৯৬ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। অথচ এখন ব্যাংকিং খাতে মোট তারল্য আছে প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ অতিরিক্ত তারল্য এক লাখ ৩৯ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। এই সময়ে আট হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা অলস রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের কাছে।

এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকগুলোর কাছে ছয় হাজার ৬৩৩ কোটি, প্রচলিত ধারার বেসরকারি ব্যাংকের কাছে রয়েছে চার হাজার ২৪৯ কোটি এবং বিদেশি ব্যাংকের কাছে চার হাজার ছয় কোটি টাকা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই