ঢাকা : করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অন্যান্য খাতের মতো ক্ষতি এড়াতে পারেনি দেশের চামড়া শিল্পও। তবে মহামারির ধকল কাটিয়ে আবারো রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে এই খাত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০২০-২১) এ খাত থেকে রপ্তানি আয় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা (৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার); যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয়েছিল ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে টিকা কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় সামনে বাজারের পরিস্থিতি আরো ভালো হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। এজন্য সরকার আগামী অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৩১ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, ‘যদিও এবার আগের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে। তবে করোনার কারণে ইউরোপের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তাছাড়া, বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম যেহেতু বাড়েনি, তাই গত বছর সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছিল, আমরা চাই এবারও সেটি থাকুক।’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইউরোপের পাশাপাশি জাপানের বাজার খোলার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা।
এ বি এস ট্যানারি লিমিটেডের মালিক মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের হিসেবে চীনে আমরা প্রায় শতভাগ রপ্তানি করতাম। কিন্তু ঈদের আগে বন্ধ হয়ে দুদিন আগে আবার খুলেছে। আমাদের আগের অনেক মাল ডেলিভারি হয়নি। জাপানের বাজারও হয়তো শিগগিরই খুলবে বলে আশা করি।’
এদিকে, যে উদ্দেশ্যে রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরিত হয়েছে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। এখনো বেশিরভাগ ট্যানারি পরিবেশ সনদসহ বেশকিছু সনদ হাতে পায়নি। অথচ বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে এসব সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। এ কারণে, চামড়া শিল্প রপ্তানিতে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ বি এস ট্যানারির ইমাম হোসাইন বলেন, ‘যেজন্য আমরা হেমায়েতপুরে এসেছি সেই লক্ষ্য থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে। কবে নাগাদ সেসব লক্ষ্য পূরণ হবে জানিনা। আর একারণে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমরা সরাসরি চামড়া কিংবা চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে পারছিনা।’
এ প্রসঙ্গে আরাফাত লেদার কমপ্লেক্সের মালিক মোহাম্মদ মনির হোসাইন বলেন, ‘আমাদেরকে সরকার এতদিন এখানে আনার জন্য নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছে । এখন আমরা চলে এসেছি কিন্তু সরকারের দিক থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের দিক থেকে সহযোগিতার কোনো কমতি নেই।’
এদিকে, প্রতিবছর সরকার চামড়া ব্যবসায়ীদের সহজশর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। তবে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা গতবারের চেয়ে আরো বেশি ঋণ সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
এদিকে, আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণসহ অন্যান্য বিষয়ে জরুরি বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে ওই সভায় জানানো হয়, এবারো কোরবানির কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এ দাম বেঁধে দেওয়া হবে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে কেনার কারসাজি হলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সভা থেকে এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
গত বছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা এর আগের বছর (২০১৯ সাল) ঢাকায় ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
সোনালীনিউজ/এমটিআই