সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের আমানতের মতোই বন্ডে মুনাফা দেবে ৯ শতাংশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২, ১২:১২ পিএম

ঢাকা : পুঁজিবাজারের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের আমানতের মতোই ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে বন্ডে বিনিয়োগ করলে কোনো ঝুঁকি ছাড়াই ন্যূনতম ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদ বা মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি মাসেই পুঁজিবাজারে এরকম ৩ লাখ কোটি টাকার বন্ডের লেনদেন শুরু হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে ইকুইটির পাশাপাশি ডেবট ঋণের বাজারও সংযোজন হচ্ছে পুঁজিবাজারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগ পুঁজিবাজারে জন্য ইতিবাচক। সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারা বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন। এতে ব্যাংকের ওপর ঋণের চাপ কমবে।

বিএসইসির তথ্য মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ২৫৬টি টেজারি বন্ড রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৩টি টেজারি বন্ডের লেনদেন চালু হবে। বন্ডগুলোর লেনদেন চালুর জন্য ইতোমধ্যে দুটি মক লেনদেন বা পরীক্ষামূলক লেনদেন অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাইভে যাওয়ার আগে আরও একটি মক লেনদেন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে লেনদেন শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

টেজারি বন্ড কী, বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন: ট্রেজারি বন্ড হলো সরকারি বিল বা বন্ড, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। যার মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর থেকে ২০ বছর। এই বন্ডের মাধ্যমে সরকার পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। এখানে বিনিয়োগ করলে টাকা হারানোর কোনো ঝুঁকি থাকবে না। বরং বছরে ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদ বা মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি পাবেন কর রেয়াত।

এতদিন এই বন্ড বিনিয়োগকারীরা কেনা-বেচা করতে পারতেন না পুঁজিবাজারে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে কেনা-বেচা হতো। জনপ্রিয়তাও ছিল না। বন্ড মার্কেটে যাতে সব বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে এর লেনদেন শুরু হচ্ছে।

কারা কীভাবে বিনিয়োগ করতে পারবেন: ‘এ’ ক্যাটাগরিতে পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে বন্ডগুলো। উদ্বোধনের দিন লেনদেন হবে ২৫৩টি বন্ডের, যার বাজার মূল্য ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এই ট্রেজারি বন্ডে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। তার জন্য নতুন করে কোনো বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না। তবে বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ বন্ডের ইউনিটের ফেসভ্যালু হবে ১০০ টাকা। লট হবে দশ হাজারটি। সরকারি টেজারি বন্ডগুলোর মেয়াদ হবে যথাক্রম ২ বছর, ৫ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর এবং ২০ বছর।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সরকারি বন্ড লেনদেন চালু হবে।

তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের দুটি সাইড আছে। এর মধ্যে একটি হলো ইকুইটি এবং অন্যটি ডেবট। ইকুয়িটি হলো শেয়ার, আর ডেবট হলো বন্ড। আমরা শেয়ার মার্কেট নিয়ে অনেক কাজ করছি। কিন্তু বন্ড নিয়ে কাজ তেমন হয়নি। কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমি অর্থসচিব থাকার সময় আলাপ হয়েছে। তাকে বন্ড মার্কেট নিয়ে কাজের পরামর্শ দিয়েছি। তিনি দীর্ঘদিন বন্ড মার্কেট নিয়ে কাজ করছেন।

শিগগিরই সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের লেনদেন চালু হবে জানিয়ে গভর্নর বলেন, সরকারি বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে ফেলেছে। এরই মধ্যে ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক কাজ) হয়ে গেছে, শিগগিরই এটা লাইভে যাবে। তখন সরকারি বন্ডগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই