বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে থাকবে ১০ দুর্বল ব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২২, ১২:১৬ পিএম

ঢাকা: দুর্বল ১০টি ব্যাংককে নিবিড় তদারকির আওতায় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর সাথে বৈঠকও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে এই দশ ব্যাংককে তদারকির আওতায় আনা হলেও এটি কতটা ফল দায়ক হবে তা নিয়ে সন্ধিহান খাত সংশ্লিষ্টরা।

এর আগেও কয়েকটি ব্যাংককে বিভিন্ন সময় তদারকির আওতায় আনা হয়েছিলো। কিন্তু এর কোন ফল পাওয়া যায়নি। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে সবগুলো ব্যাংকের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণের পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ব্যাংক খাতে সুশাসন আনতে ১০টি ব্যাংককে নিবিড় তত্ত্বাবধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এই দশটি ব্যাংক তিন বছর মেয়াদি চুক্তি করবে। যেখানে ব্যাংকগুলো তাদের আগামী তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা জানাবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি তদারকি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি খাতের পদ্মা, ন্যাশনাল ও এক্সিম ব্যাংক। আর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জনতা, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়নে থাকা একমাত্র বিদেশি ব্যাংক হচ্ছে, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিবিড় তত্ত্বাবধান শুরু হতে যাওয়া এসব ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। ব্যাংটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ৯৯ শতাংশই খেলাপি। টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা।

এরপরই রয়েছে পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৬৮ শতাংশ। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) ৯৮ শতাংশের ঘরে। কিন্তু আইন অনুয়ায়ী, ব্যাংকের মোট আমানতের শতকরা ৮৭ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারে না। এ ছাড়া ব্যাংটির মূলধন ঘাটতি ১০৫ কোটি টাকা।

সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে, জনতা ব্যাংকের ২৫ ভাগই জুন শেষ খেলাপি হয়ে পড়েছে। টাকার অংকে যা ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। আর ৬৪০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ব্যাংকটি। মার্চভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯১৫ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে জনতা ব্যাংক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি। বিতরণকৃত ঋণের যা ২৩ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯১ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২১ শতাংশ। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। ৮২৯ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে ব্যাংকটির।

রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৪৬৬ কোটি, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। এ মুহূর্তে ব্যাংকটির ২ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি এবং ১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। ব্যাংকটির ২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি এবং ১ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ১২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংককেও রাখা হয়েছে নিবিড় তত্ত্বাবধানের এ তালিকায়। কারণ ২৭ জানুয়ারি ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) হার ৯৭ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্ধারিত সীমার অনেক ওপরে। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

সোনালীনিউজ/এআর