এইচটিটিপুলের কার্যক্রম সীমিত

বাংলাদেশে এফ-কমার্স উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে

  • আবদুল হাকিম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩, ০৪:২৯ পিএম

ঢাকা : বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজারের একটি বড় অংশ ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা, যারা ফেসবুকে পেজ চালু করে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পণ্যের প্রচারণার জন্য তাঁরা ফেসবুক বা মেটার অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতেই বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। সম্প্রতি একটি বিষয় সামনে আসে ফেসবুক বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একরকমের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

মূলত ফেসবুক নয়, ফেসবুকের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এইচটিটিপুল বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছিল। ফলে দেশের অনেক গ্রাহক থেকে শুরু করে এফ-কমার্স হিসেবে পরিচিত ফেসবুকনির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। তবে এ সমস্যা শুধু এইচটিটিপুলের গ্রাহকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফেসবুক বাংলাদেশে তাদের বিজ্ঞাপনী কার্যক্রম সীমিত করেনি। বরং অন্যান্য বিকল্প পথ, যেমন: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। পাশাপাশি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সদস্যদের ইসলামী ব্যাংকের কো-ব্র্যান্ডেড প্রিপেইড কার্ড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, তারা সেটি ব্যবহার করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপনী কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।

এফ-কমার্স বা ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা হচ্ছে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের বড় অংশ। যারা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করে, তারা তাদের পণ্য প্রচারণার জন্য ফেসবুক বা মেটার অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোয় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। সুতরাং বিজ্ঞাপন কার্যক্রম কমিয়ে দেওয়ায় ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে।

উল্লেখ, এইচটিটিপুল নামক একটি প্রতিষ্ঠান, যারা ফেসবুকে অথরাইজড একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা। যারা বাংলাদেশে কিছু বিশেষ গ্রাহকের বিজ্ঞাপনী পরিষেবা দিয়ে থাকে। যারা ফেসবুকে বড় বা মোট অঙ্কের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, এইচটিটিপুল মূলত তাদের পরিষেবা দিয়ে থাকে। এখন এইচটিটিপুল তাদের পরিষেবা সীমিত বা উঠিয়ে নিয়েছে। ফেসবুক কিন্তু এ কাজটি করেনি। এমন-না যে ফেসবুক বাংলাদেশ থেকে বিজ্ঞাপন নেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে।’

এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বেশ কিছুদিন ধরে গুঞ্জন চলছিল যে এইচটিটিপুল বাংলাদেশের কাছে নয় মাসের বিল পায় ফেসবুক। এইচটিটিপুল মুলত পরিষেবাটি দিতে গিয়ে তাদের বিপুল অঙ্কের ডলার দেশের বাইরে পাঠাতে হয়। যেহেতু ডলার সংকটের প্রেক্ষাপটে আইনগত কিছু জটিলতা আছে, সেহেতু এইচটিটিপুল বিদেশে ডলার পাঠাতে পারছিল না। ফলে তাদের প্রচুর পরিমাণে বকেয়া জমা পড়েছে। ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির একটি ব্যবসায়িক মন্দা যাচ্ছে। কাজেই এইচটিটিপুল তাদের পরিষেবা বন্ধ করেছে। ফেসবুক তাদের পরিষেবা বন্ধ করছে না।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্তে শুধু এইচটিটিপুলের গ্রাহকরাই ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। যারা ছোট ছোট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালান বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতেন, তারা আগের মতো একইভাবে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ফেসবুকের কোনো আপত্তি নেই। বিষয়টি হয়তো ফেসবুক জানেও না যে ঘটনাটি এমন ঘটেছে। বড় বড় বিজ্ঞাপনী এজেন্সি, যাদের মোটা অঙ্কের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে তাদের একটু সমস্যা হবে। তবে তারাও হয়তো বিকল্প কোনো পন্থা খুঁজে নেবে।’সে ক্ষেত্রে ‘বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের দেশের বাইরে থাকা সহায়ক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি করিয়ে নেবে।

এক্ষেত্রে যেমন: ‘এ’ একটি বাংলাদেশি কোম্পানি, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে একটি শাখা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ‘এ’ তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা শাখা দিয়ে বুস্ট করিয়ে নেবে। এভাবে হয়তো অনেকেই বিজ্ঞাপন দেবেন। এ ছাড়া ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে (ডুয়েল কারেন্সি কার্ড) করিয়ে নিতে পারবে। বা তাদের যদি ক্রেডিট কার্ড না থাকে, তাহলে থার্ড পার্টি যাদের ক্রেডিট কার্ড আছে তাদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারবে।’

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এফ-কমার্স বা ফেসবুকভিত্তিক সেবা প্রদানকারি এজেন্সি ডিজিটাল আইটি পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরাফাত হোসেন রকি বলেন, আমার ছোটখাটো একটা এজেন্সি আছে, মাসে মোটামুটি ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলারের বুস্ট করতাম, এইচটিটিপুল ডলার লিমিট করে দেওয়ার পর এখন আর আগের মত করতে পারছি না। এখন ব্যবসাটা টিকিয়ে রাখার জন্য মাসে মিনিমাম ৫-৬ হাজার ডলার প্রয়োজন। এমন অবস্থায় আমি বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে দাঁড়াবে।

ই-ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক ও ফেসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) সভাপতি নাসিমা আক্তার সোনালী নিউজকে বলেন, বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেওয়ায় ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে নারী ও ছোট উদ্যোক্তারা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এর প্রভাব বেশি পড়েছে যারা বড় বাজেটে বিজ্ঞাপন দিতো। অনেকে এজেন্সি খুলে বিজ্ঞাপনের কাজ করে তারা ক্ষতি হয়েছে। তবে এই সমস্যা হয়তো বেশি দিন থাকবে না।

প্রসঙ্গত, উবার, দারাজ, ফুডপান্ডার মতো প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে বিজ্ঞাপনী বিল তাদের মূল প্রতিষ্ঠান দিয়ে করে থাকে। কাজেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সমস্যার মুখে পড়তে হবে না। এদিকে দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বেসিসের সদস্যদের কো-ব্র্যান্ডের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে, যে কার্ড দিয়ে তারা সাধারণত হোস্টিং, সফটওয়্যার লাইসেন্স বিল পরিশোধ করে থাকে। তবে যেহেতু এ কার্ডের মাধ্যমে ফেসবুক বা অন্যান্য বিল পরিশোধ না করতে পারার রীতিনীতি নেই, সেহেতু তারা এই কার্ড ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই