সাক্ষাৎকারে ডিএসই’র নতুন এমডি

‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজার মনিটরিং আরও জোরদার করবো’ 

  • আবদুল হাকিম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান।

ঢাকা: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগদান করেছেন ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান। তিনি ২৫ বছরেরও বেশি সময় পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। এর আগে তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালকের পদে থেকে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। 

তারিকুজ্জামানের দেশে ও বিদেশে শিক্ষকতা পেশায় ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের স্কুল অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড কমার্শিয়াল ল’তে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তার কর্মপরিকল্পনা এবং সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর নতুন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক কথা বলেছেন সোনালী নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোনালী নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালী নিউজ: পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে আপনার কি পদক্ষেপ থাকবে?

এ টি এম তারিকুজ্জামান: পুঁজিবাজার থেকে ম্যানিপুলেশন/কারসাজি বন্ধ করার অনেকগুলো উপায় আছে। আমাদের ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সিস্টেমগুলো যদি আধুনিক হয়। মিস ম্যানেজমেন্টের টুল যদি প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকে এবং কন্ট্রোল ম্যাকানিজমটা থাকে তাহলে সেখানে বড় একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এছাড়াও ব্রোকার হাউজের যারা ট্রেড করে তাদের এওয়ারনেস বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে ডিএসই থেকে আমরা সার্ভেলেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে মনিটরিং করে থাকি যদি কেউ ম্যানিপুলেশন করার চেষ্টা করে সেখানে ধরা পড়বে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত আমাদের কর্মকর্তারা করে থাকেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করার আওতায় আনা হয়। এই পদক্ষেপগুলো আরও জোরদার করবো যাতে বিনিয়োগকারীরা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।

‘ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আমি বলবো ম্যানিপুলেশন একটা বড় অপরাধ। যা বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট করে। বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা চেষ্টা করবো যেভাবেই হোক ম্যানিপুলেশনটা দূর করার। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো। এটা আমাদের অন্যতম প্রায়োরিটি।’
 
সোনালী নিউজ: জিডিপিতে পুঁজিবাজারের ভূমিকা বাড়াতে স্টক একচেঞ্জের ভূমিকা কি হওয়া উচিত? এক্ষেত্রে আপনি কি ভূমিকা রাখবেন?

এ টি এম তারিকুজ্জামান: বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ যখন বাড়বে লেনদেনের পরিমাণও বাড়বে, এর সাথে মার্কেট ক্যাপের একটা সম্পর্ক আছে । মার্কেট ক্যাপ যখন বাড়বে জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন বাড়বে। এটা একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আগে বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। ইস্যুয়ার কোম্পানি বাড়াতে হবে। ইস্যুয়ার বাড়াতে বাজারের সুশাসন প্রয়োজন। অনেক বেশি টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট বাড়াতে হবে যাতে করে গভর্নেন্সটা আরও ইম্প্রুভ করা যায়। এর ফলে বাজারে নতুন নতুন কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়বে, এটাই সোর্স অফ ক্যাপিটাল হিসেবে যুক্ত হবে। সেটাই অর্থনীতি বা জিডিপিতে ভূমিকা রাখবে।

সোনালী নিউজ: ডিএসইতে আইটি সেক্টরে মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা যায়, যার ফলে কয়েকবার লেনদেনে সমস্যা হয়েছিল। এমন অনাকাঙ্খিত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কোনো পদক্ষেপ নিবেন কিনা?

এ টি এম তারিকুজ্জামান: আমার অন্যান্য কাজের মধ্যে আইটি খাতটা একটা প্রায়োরিটির জায়গা। স্টক এক”চেঞ্জ এমন একটা প্লাটফর্ম যা ইনফরমেশন অব টেকনোলজি এটা আধুনিকায়ন বা উন্নয়ন করতেই হবে। বাজারের প্রসার বৃদ্ধি নির্বিঘ্নে বা সহজে লেনদেন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে আমাদের এটা উন্নয়ন করতেই হবে। এক কথায় আমাদের টেকনোলজির দিক থেকে আরো বেশি স্মার্ট হতে হবে। দেশনেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তার সাথে অংশগ্রহণ করতে আমাদের টেকনোলজিকে উন্নত করতেই হবে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা স্টক মার্কেটকে স্মার্ট ক্যাপিটাল মার্কেটে রুপ দিবো।

সোনালী নিউজ: নতুন প্রোডাক্ট সংযুক্ত করতে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

এ টি এম তারিকুজ্জামান: নতুন প্রোডাক্ট আনার যে চেষ্টা সেটা আমাদের থাকবে। তবে আমরা এমন একটা পজিশন তৈরি করতে চাই যাতে কাজে নেমে ফিরে আসতে না হয়। সব চেয়ে বড় কথা আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসার কাজে অগ্রসর হবো। মার্কেটে প্রোডাক্ট বেশি থাকলে বিনিয়োগকারীদের চয়েজ করার সুযোগ থাকবে এবং অংশগ্রহণ বাড়বে। তখন মার্কেট আরও বড় হবে। সার্বিক বিবেচনা করলে দেখা যায় শেয়ারবাজারে নতুন কিছু আসবে এটা একটা প্রক্রিয়া, আমরা সেই প্রক্রিয়ার ধারা অব্যাহত রেখে প্রয়োজনের আলোকে কাজ করে যাবো।

সোনালী নিউজ: পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে আপনার ভাবনা কি?

এ টি এম তারিকুজ্জামান: নারীদের পুঁজিবাজার বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে ৩টি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। বিএসইসির একটি ট্রেনিংউইং, বিআইসিএম ও বিএএসএম।

‘বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমকে শহরে থেকে গ্রামঞ্চলে সবার মাঝে ছাড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। তবে প্রচারণা যত বাড়াবে পুঁজিবাজারে নারীদের অংশগ্রহণও বাড়বে। কারণ অনেকে পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানে না। এজন্য প্রমোশনাল কাজ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নত দেশগুলো প্রচারণার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিছু দিন আগেও ডিএসইতে একটি এওয়ারনেস প্রোগ্রাম করেছে সেখানে অনেক নারীর উপস্থিতি আমরা দেখতে পেয়েছি। প্রচারণার মাধ্যমে জানান দেওয়ার ব্যাপারে বিএসইসি যেমন পরামর্শ দিচ্ছে একইভাবে আইএসকোরও এটা পরামর্শ যাতে নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কাজগুলো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো করে যাচ্ছে, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান সবাই প্রশিক্ষণমুলক কাজগুলো করছে। আমাদেরও এই চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। তাহলে পুরুষ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি নারী বিনিয়োগকারীরাও বাজারে আসতে অনুপ্রেরণা এবং সঠিক উপায় খুঁজে পাবে।’

সোনালী নিউজ: বিনিয়োগকারীদের উদ্দ্যেশে আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

এ টি এম তারিকুজ্জামান: পুঁজিবাজার বড় একটা জায়গা এখানে অনেক কিছু হয়। কেউ প্রতারিত হচ্ছে কেউ গুজবে কান দিয়ে অর্থ হারাচ্ছে আবার কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যামে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করবো বিনিয়োগকারীদের এসব সমস্যাগুলো সমাধানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে। যাতে করে যারা প্রতারিত হচ্ছে তারা আর প্রতারিত না হয়। এক্ষেত্রে রিস্ক ম্যানেজমেন্টটাকে আমরা জোরদার করবো। সবশেষ একটি কথা বলতে হয়, কারো কথায় নয় নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। এতে পুঁজি হারানোর ভয় কম থাকবে। বিভিন্ন রকম গুজব বাজারে প্রচলিত। এগুলোতে কান দেওয়া যাবে না। বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে লস হবে না। সুতারাং সবাইকে বলবো সতর্ক থেকে নিজের পুঁজি সেভ রেখে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করুণ। এতে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এএইচ/আইএ