নভেম্বরের মধ্যেই বিজিএমইএর তথ্যভাণ্ডারে ৩০ লাখ নিবন্ধিত শ্রমিক

  • জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৬, ০৭:১১ পিএম

অবশেষে গতি এসেছে গার্মেন্টস খাতে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক ওয়ার্কার ডাটাবেজ বা তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় দুই হাজার কারখানা তথ্যভাণ্ডারের জন্য নিবন্ধন করেছে। সেইসঙ্গে আট শতাধিক কারখানার সাত লাখের অধিক শ্রমিক ইতোমধ্যে তথ্যভাণ্ডারের আওতায় এসেছে।

আগামী নভেম্বরের মধ্যে চালু রয়েছে এমন সব সদস্য কারখানাগুলোকে এবং সেসব কারখানার সব শ্রমিককে এর আওতায় আনতে কাজ চলছে জোরেশোরে। সে ক্ষেত্রে নভেম্বরের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক তথ্যভাণ্ডারের মধ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যকেই সামনে রেখে কাজ করছে বিজিএমইএ। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ। তখন থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্যবার সময় বাড়ানো হয়। তাগাদা দেয়া হলেও ২০১৩ সাল থেকে গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন বছরে তালিকাভুক্ত হয়েছিল মাত্র ৩৭৬ গার্মেন্টস কারখানা। এরপর বিজিএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বিষয়টিতে অধিক গুরুত্ব দিলে এবং গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি হুশিয়ারি দেন তথ্যভাণ্ডারের জন্য কারখানার নাম তালিকাভুক্ত না করলে ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লিয়ারেশন) বাতিল করাসহ অন্যান্য সার্ভিস বাধাগ্রস্ত করা হবে। এই হুঁশিয়ারির পর গার্মেন্টস মালিকরা একটু নড়েচড়ে বসেন। এরপর প্রতিমাসেই তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধনের তালিকা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩০ আগস্টের মধ্যে নিবন্ধন সম্পূর্ণ করতে হবে।

বিজিএমইএ সূত্রে, ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত মোট ১ হাজার ৯৪৯টি গার্মেন্টস কারখানা তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ১ হাজার ৬৮৪টি এবং চট্টগ্রামে ২৭২টি। সেইসঙ্গে এখনও পর্যন্ত ৮৩৫টি কারখানার মোট সাত লাখ শ্রমিক নিবন্ধনের আওতায় এসেছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত মোট গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে ৪ হাজার ৩০০টির মতো। এর মধ্যে চালু রয়েছে ৩ হাজার ২০০টির মতো। আর ইউডি নিচ্ছে ২ হাজার ২০০টির মতো কারখানা। সুতরাং গত ৩০ আগস্টের মধ্যে প্রায় দুই হাজার কারখানা নিবন্ধনের আওতায় আসাকে বড় সফলতা মনে করছেন বিজিএমইএ নেতারা।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, এখনও পর্যন্ত তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধনের যে অগ্রগতি তাতে আমরা সন্তুষ্ট। যেহেতু দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি, তাই হঠাৎ করেই এত বড় কাজ সম্পন্ন করা যাবে তেমনটি নয়। বিজিএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ তথ্যভাণ্ডারের বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়ায় গত ছয়-সাত মাসে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। 

তবে এখনও পর্যন্ত যারা নিবন্ধনের আওতায় আসেনি তাদেরকে ইউডি সেবাসহ অন্যান্য সেবা দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। সুতরাং ব্যবসা করতে হলে তথ্যভাণ্ডারের আওতায় আসতেই হবে। তবে বিজিএমইএ এ কাজের অনেক অগ্রগতি করলেও বিকেএমইএ’র কাজের গতি কতটা হল সেটা আমাদের জানা নেই। সেইসঙ্গে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত নয় এমন অনেক কারখানা রয়েছে। তারা তথ্যভাণ্ডারের আওতায় না এলে সে দায় আমরা নেব না।

বায়োমেট্রিক ওয়ার্কার ডাটাবেজের মাধ্যমে সুবিধা মিলবে, যেমন-কোনো কারণে বিজিএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের তথ্য নষ্ট হলে, তা সার্ভার থেকে পুনরায় সংগ্রহ করা যাবে। শ্রমিকের সারা জীবনের চাকরির তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে। প্রত্যেক শ্রমিকের একটি ইউনিক আইডি তৈরি হবে, যার মাধ্যমে শ্রমিকদের আইডি কার্ড প্রিন্ট করা সম্ভব হবে।

এছাড়া এই ডাটাবেজের মাধ্যমে প্রকৃত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সহজেই শনাক্ত করা যাবে। গার্মেন্টস শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হওয়াসহ মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সু-সম্পর্ক সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। তথ্যভাণ্ডার তৈরির জন্য সিসটেক ডিজিটাল লিমিটেড ও টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিজিএমইএ। তাদের তত্ত্বাবধানেই কাজ চলছে তথ্যভাণ্ডারের।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি