এডিপির ঋণ ফেরত দিতে চায় একাধিক মন্ত্রণালয়

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০১৬, ০৩:৩১ পিএম

বিশেষ প্রতিনিধি
ব্যয় না হওয়ার আশঙ্কায় এডিপিসহ বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দ ফেরত দিতে চায় একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ ছিল ৬২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান থেকে বাকি ৩৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু অর্থবছরের ৬ মাসের মাথায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকাই ফেরত দিতে চায়। বছর শেষে এই ঋণ বরাদ্দ ব্যয় না হওয়ার আশঙ্কায় আগেই টাকা ফেরত দেয়ার আবেদন জানিয়েছে ওসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট কোনো প্রকল্পে বরাদ্দের ২০ শতাংশের বেশি অর্থ ফেরত না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী এডিপি সংশোধনে বড় অংকের কাটছাঁটেরও বিপক্ষে। ইআরডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশোধিত এডিপি (আরডিপি) চূড়ান্ত করার আগেই বিপুল পরিমাণ বিদেশি সহায়তাপুষ্ট অর্থ ফেরতের আবেদন করেছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অর্থ ফেরতের প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়েছেন। তিনি বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট কোনো প্রকল্পে বরাদ্দের ২০ শতাংশের বেশি অর্থ ফেরত না দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত ইআরডির সাথেই এডিপি বাস্তবায়নকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্পভেদে অর্থ ফেরতের প্রস্তাব করে। তাতে বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে অনেক প্রকল্পেরই মূল এডিপির বরাদ্দের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ফেরত দিতে চায়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় বাড়াতে প্রকল্পে ২০ শতাংশের বেশি অর্থ না কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রীর ওই নির্দেশ ইআরডির উপ-সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে জানিয়েও দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের জনবল নিয়োগে বিলম্ব, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি ও অনুমোদন বিলম্ব, পণ্য বা সেবা সংগ্রহে দীর্ঘসূত্রতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় ও পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রতার কারণে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে সময়মতো অর্থ ব্যবহার করা যায় না। এজন্য বাস্তবায়নকারী সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি দাতাসংস্থাগুলোও বহুলাংশে দায়ী। দাতা সংস্থাগুলোর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ ১২৫ কোটি টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দিতে চায়। তাছাড়া ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিটে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি রেখে বাকি টাকাও ফেরত দিতে চাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এমন আরো কয়েকটি প্রকল্পের বিদেশি সহায়তাও বিদ্যুৎ বিভাগ ফেরত দিতে চায়। সব মিলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিভাগেরই বরাদ্দের ২০ শতাংশের বেশি বিদেশি সহায়তা ফেরত যাবে।
সূত্র আরো জানায়, সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২০ শতাংশের বেশি টাকা ফেরত দিতে চায়। এজন্য ইআরডি ওসব মন্ত্রণালয়কে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। তাছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এডিপিতে সরকারি কোষাগারের ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। আর একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ থেকে খরচ হয়েছে ২০ শতাংশ অর্থ। তাছাড়া ৬ মাসে এডিপিতে সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ খরচ হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা।

সোনালীনিউজ/এমএইউ