ঢাকা: আইন বলছে সর্বোচ্চ ৬ মাসের বেশি কোনো বীমা কোম্পানি মূখ্য নির্বাহীর পদ শূন্য রাখতে পারবে না।
কোনো বীমা কোম্পানি এই আইন না মানলে সে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । আইনে এমন নির্দেশনা থাকার পরও ৪ বছরের বেশি সময় ধরে মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ দেয়নি গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
আইডিআরএ বলছে, ইতমধ্যে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বীমা কোম্পানিটিকে। অন্যথায় কোম্পানিটিকে পুনরায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে।
তবে ৪ বছর পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলেও এটাকে অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া বলে মন্তব্য করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোনো একটি কোম্পানি ৪ বছরের বেশি সময় ধরে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়নি -এটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমন পরিস্থিতে প্রথম ৬ মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার করণীয় কী- তা সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে বীমা আইনে।
অথচ বীমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রাথমিক ধাপ জরিমানা আরোপ করতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সময় পেরিয়েছে ৪ বছর। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, এ সংক্রান্ত আইন অমান্য করায় আইডিআরএ যে পরিমাণ জরিমানা আরোপ করতে পারে তার অনেকগুণ বেশি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী।
তাই কয়েক বছর পর আইনগত ব্যবস্থা নিলেও তার প্রভাব পড়ে না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর। যা বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা তৈরিতে সহায়তা করে।
সূত্র মতে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ শূন্য রয়েছে।
এর আগে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন এম এম মনিরুল আলম। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকেই কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রাকিবুল করিম মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ রাকিবুল করিম গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) হিসেবে যোগদান করেন ২০১৯ সালের মে মাসে, অর্থাৎ এক বছর ৮ মাস আগে। এর আগে তিনি কেপিএমজি বাংলাদেশের ডাইরেক্টর অব অডিট এন্ড এডভাইজরি সার্ভিসেস ছিলেন। এ ছাড়াও গ্রামীণ ফোন ও বাংলালিংকের মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন তিনি।
তবে গার্ডিয়ান লাইফের আগে কোন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেননি শেখ রাকিবুল করিম। এই হিসাবে বীমা খাতে শেখ রাকিবুল করিমের কর্ম অভিজ্ঞতা দাঁড়ায় সর্বমোট ৫ বছর ১০ মাস।
[245107]
অথচ সংশোধিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ অনুসারে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে তার কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে- ‘ইতোপূর্বে কোনো বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে বা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যূন ২ বৎসরের অভিজ্ঞতাসহ বীমা ব্যবসায় অন্যূন ১২ বৎসরের অভিজ্ঞতা’।
অর্থাৎ প্রবিধানমালায় নির্ধারিত অভিজ্ঞতার কোনো শর্তই পরিপালন করেন না শেখ রাকিবুল করিম। অথচ এই অযোগ্য ব্যক্তিকেই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে বছরের পর বছর আইন লঙ্ঘন করে আসছে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও লুকোচুরি:
২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর ডেইলি অবজার্ভার পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় ‘জব কনটেক্সট-সিইও’ এই শিরোনামে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গার্ডিয়ান লাইফ। তবে ওই বিজ্ঞাপনের কোথাও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম তথা গার্ডিয়ান লাইফের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এমনকি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানে কোনো ঠিকানাও ব্যবহার করা হয়নি বিজ্ঞাপনে। আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন পাঠানোর জন্য যে ই-মেইল ঠিকানা দেয়া হয়েছে তাতেও গার্ডিয়ান লাইফ বা প্রতিষ্ঠানকে ধারণ করে এমন কোন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।
এছাড়াও সম্প্রতি চীফ এন্টারপ্রাইজ বিজনেস অফিসার ‘সিইবিও’ নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশ থাকার পরও এখন পর্যন্ত বীমা কোম্পানিটি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সোলায়মান বলেন, এখনো মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ না দেওয়ায় ইতমধ্যে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে জরিমানা করা হয়েছে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে কোম্পানিটিকে। আসলে নিয়োগে অনীহা ও অযোগ্য ব্যাক্তি দিয়ে কেন প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হচ্ছে এ বিষয়টি বোধগম্য নই।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাকিবুল করিমের সাথে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
এআর