ঢাকা: আর্থিক সংকট আর বিনিয়োগে নানান শর্তের কারণে কমেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। অনেকেই আবার আগের কেনা সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির পর ভাঙাচ্ছেন। কিন্তু সেই হারে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে না।
অন্যদিকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে অনেকটাই আস্থা ফিরতে শুরু করেছে ব্যাংকের প্রতি। তাছাড়া ট্রেজারি বন্ড ও ব্যাংকের সুদ বা মুনাফার হারও এখন ভালো। এ কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না বেড়ে ঋণাত্মক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে।
সঞ্চয়পত্রে ছন্দপতন, কেনার চেয়ে ভাঙছে বেশি
কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাসানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পেনশনের একটা টাকায় বাসার কাজ করেছিলাম। বাকি টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনেছিলাম। এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চেয়ে ব্যাংকে লাভ বেশি। ব্যাংকের মাধ্যমে বন্ডে বিনিয়োগ করতে চাই। ট্রেজারি বন্ডের মুনাফা অনেক ভালো। তবে আমারটা ভাঙালেও স্ত্রীরটা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকবে।’
[249746]
জানা যায়, ‘মানুষের সঞ্চয় কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। এটা বলতে গেলে সরকারের বিপক্ষে চলে যায়। তবে এটাই বাস্তবতা। জীবনযাত্রার ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ এখন সংকুচিত হয়ে গেছে। অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। অনেকেই মেয়ের বিয়ে বা ছেলে বিদেশে পড়তে যাবে এ কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙছে।
ডিপিএস-এফডিআরে কোন ব্যাংকে কত মুনাফা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনও বলছে, সঞ্চয়পত্রে মানুষের আগ্রহ কমছে। বিক্রির চেয়ে বাড়ছে ভাঙানোর পরিমাণ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে সাড়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য সরকারের। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে প্রথম সাত মাসে ৪৩ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙা হয়েছে।
অর্থাৎ সাত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যে টাকা পেয়েছে, সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর ফলে তার চেয়ে সাত হাজার ১৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে।
গত অর্থবছরের পুরো সময়ই (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল। ১২ মাসে আগের আসল ও সুদ বাবদ ২১ হাজার ১২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিক্রির চেয়ে আগের সুদ-আসল বাবদ সাত হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা কমেছে। বিপরীতে ব্যাংক আমানত ও সরকারের বিল-বন্ডের সুদের হার বেড়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে অন্য আর্থিক খাতকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে মানুষ।
এআর