ঢাকা: দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে গত ২৮ ও ২৯ জুন অনুষ্ঠিত কমপ্লিট শাটডাউনের ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জানতে ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বাণিজ্য সংগঠনের নাম, ব্যবসার ধরন, ক্ষয়ক্ষতির ধরণ ও বিবরণ এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ—এই চারটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে এসব তথ্য জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
একই দিনে এফবিসিসিআই থেকেও অনুরূপ তথ্য চেয়ে খাতভিত্তিক সব সংগঠন, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, আমদানি-রপ্তানি গ্রুপ এবং বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন ও স্থলবন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অপসারণ ও রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে গত মে ও জুন মাসে প্রায় ২০ দিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এর অংশ হিসেবে ২৮ ও ২৯ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করা হয়।
এদিকে গত ১৬ জুলাই শাটডাউনের কারণে সৃষ্ট রাজস্ব ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। ওই কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪ আগস্ট, যেখানে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এফবিসিসিআই মহাসচিব মো. আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, গত মে-জুন মাসে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মচারীরা কর্মবিরতি ও শাটডাউনে অংশ নেওয়ায় শিল্প, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্দর, আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন, সেবা খাত, লজিস্টিক ও সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।
বিশেষ করে আমদানিকারকরা শিল্পের কাঁচামাল ও উপকরণ এবং প্রস্তুত পণ্য বন্দরে খালাস করতে পারেননি; রপ্তানিকারকরাও সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে পারেননি। ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ অর্থনৈতিক ও রাজস্ব ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এই কমিটির কার্যক্রমকে বেগবান ও ফলপ্রসূ করতে দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
নির্ধারিত ছক অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য [ইমেইল: [redwan@ird.gov.bd](mailto:redwan@ird.gov.bd) & [parvez.fbcci@gmail.com](mailto:parvez.fbcci@gmail.com)]—এই ঠিকানায় পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এর আগে সৈয়দ রবিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী, ২৮ ও ২৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বন্ধ থাকায় রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং মে-জুন মাসজুড়ে কাস্টমস, ভ্যাট ও কর বিভাগের কর্মসূচির কারণে সকল কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এবং অধীনস্থ দপ্তরগুলোর রাজস্ব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
এ ছাড়া, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাঘাতজনিত ক্ষতিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি নতুন বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। এর পরপরই মে মাসে প্রায় ১৪ দিন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে বাজেট পেশের আগে সরকারের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু একই দাবিতে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পুনরায় আন্দোলনে নামেন তারা। শেষ পর্যন্ত গত ২৯ জুন ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।
ওএফ