ঢাকা: দেশের ব্যাংক খাতের সংকটকালেও ডিজিটাল সুবিধার কারণে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গ্রাহক, আমানত, ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয়ের পরিমাণে গত এক বছরে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাস শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। এক বছরে তা বেড়ে ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ২৩৬টিতে। অর্থাৎ এক বছরে নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৯৮ জন, যা প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
ঋণ বিতরণেও বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জুনে এ খাতে ঋণ বিতরণ ছিল ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৮ কোটি টাকা—এক বছরে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫৫ শতাংশ।
প্রবাসী আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয় ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের জুনে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৫ হাজার ৫৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
অন্যদিকে, আমানত ২০২৪ সালের জুনের ৪০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৬০৫ কোটি ২৭ লাখ টাকায়। অর্থাৎ আমানত বেড়েছে ৫ হাজার ৫৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
তবে গ্রাহক ও লেনদেনে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হলেও এজেন্ট ও আউটলেটের সংখ্যা কমেছে। গত এক বছরে এজেন্ট কমেছে ৬১৮টি এবং আউটলেট কমেছে ৯১৬টি। বর্তমানে সক্রিয় এজেন্টের সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৭৩ এবং আউটলেট ২০ হাজার ৫৭৭টি।
প্রবাসী আয়ে শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক: ২০২৫ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সর্বাধিক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে, যা মোটের ৫৫ দশমিক ০৮ শতাংশ (১ লাখ ১ হাজার ২৮২ কোটি টাকা)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক (৫১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা) এবং তৃতীয় স্থানে ব্যাংক এশিয়া (১৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা)।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, সাম্প্রতিক পরিবর্তনের প্রভাব এ খাতেও পড়েছে। তবে সেবার পরিসর আরও বাড়ানো গেলে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোগ হিসেবে আমানতের সঙ্গে বিমা সেবা চালুর প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এই রেকর্ড কেবল পরিসংখ্যান নয়; এটি প্রান্তিক অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এক বিপ্লব। বিশেষ করে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিং এখন অন্যতম প্রধান চ্যানেল।”
২০১৩ সালে চালু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং ইতিমধ্যে দেশের গ্রামীণ ও ব্যাংকবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য আর্থিক সেবার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয়, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ও গ্রামীণ জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিং এখন কার্যকর বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
ওএফ