দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ০৯:২৮ এএম

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকা বা তার বেশি আমানতধারীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অসমতা ও আয়ের অপ্রতুল বণ্টনকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি হিসাব রয়েছে, যেখানে অন্তত এক কোটি টাকা জমা আছে।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের জীবনে আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয় কমছে, এমনকি অনেকেই পূর্বে জমা রাখা টাকা তুলে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে, দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণি ও বড় ব্যবসায়ীরা দ্রুত আয় বৃদ্ধি পাচ্ছেন, যার ফলে তাদের ব্যাংক হিসাবেও বাড়ছে কোটি টাকার পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেছে যে, কোটি টাকার হিসাব মানেই প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টধারী কোটিপতি নয়। কারণ, এসব হিসাবের মধ্যে ব্যক্তি ছাড়াও সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার হিসাবও অন্তর্ভুক্ত। অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন, ফলে একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক বড় হিসাবও এই তালিকায় গণ্য হয়েছে।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি। জুনের তুলনায় এটি প্রায় ৫৬ লাখ বাড়িয়েছে। তবে, কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এসব হিসাবের মোট জমার পরিমাণ কমেছে। জুনের শেষে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা ছিল, যা সেপ্টেম্বর শেষে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, তিন মাসে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকার হ্রাস ঘটেছে।

এই ধারা দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এটি আয়ের অসম বণ্টনের একটি বড় সংকেত। অর্থনীতির একাংশ দ্রুত উন্নতি লাভ করলেও, বৃহত্তর জনগণ আর্থিক সংকটে ভুগছে, যার প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে কোটিপতি আমানতধারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন। পরে ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪৩, ২০০৮ সালে তা ১৯ হাজার ১৬৩, ২০২০ সালে ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০ এবং ২০২৪ সালে তা ১ লাখ ২২ হাজার ৮১-এ পৌঁছায়। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২৮ হাজার হয়েছে।

এম