প্রবাসী আয় বাড়ছে

  • শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৬, ২০১৭, ০৩:৩৫ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) শেষের দিকে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সে পাওয়া গেলে সুখবর। মে মাস শেষে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বেড়েছে গত দশ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ফলে মন্দাভাব কাটিয়ে কিছুটা হাসির মুখ দেখছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ বলে খ্যাত এ খাতটি।

রোববার (৪ জুন) সর্বশেষ রেমিটেন্সের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, মে মাস শেষে প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের এই মাসে এসেছিল ১২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।

ব্যাংকাররা বলছেন, ঈদ পূর্ব রমজানকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা বৈধভাবেই তাদের আয় দেশে পাঠিয়েছেন। এজন্য রেমিটেন্স ও ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানোর দুই ক্ষেত্রেই প্রবাসী আয় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এটিকে দেখছে রেমিটেন্সে ঈদের চাঁদের প্রবাহ হিসেবে। যদিও এখন রমজান মাস চলেছে, কিন্তু ঈদের চাঁদ দেখার আগেই কেনা-কাটা প্রয়োজনীয় খরচের জন্য ঈদের আগেই প্রবাসীরা তাদের আয় দেশে পাঠিয়ে থাকেন। এবারো ব্যত্ক্রিম হবে না বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকর মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা সোনালীনিউজকে বলেন,‘ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেছন। এজন্য চলতি জুন মাস শেষেও রেমিটেন্স বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে সরকারি প্রচারণা ও হুন্ডিতে অর্থ পাঠানো বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগও কাজে লেগেছে। যার ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। 

এর আগে সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। চলতি বছরের গত ১১ মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের (২০১৫-১৬) একই সময়ে জুলাই-মে মাস পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছিল এক হাজার ৩৪৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এ হিসাবে এ বছরের ১১ মাসে আগের অর্থবছরের একইসময়ের চেয়ে ১৯১ কোটি ৪ লাখ ডলার কম এসেছে। সে হিসাবে এই ১১ মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

রেমিটেন্সে ভাটার কারণ
গত কয়েক বছর ধরে ধারবাহিকভাবে কমে এসেছিল রেমিটেন্স। সংকটে পড়ে বৈদেশিক লেনদেনের মুদ্রা ডলারের। বিষয়টি নিয়ে খোদ অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। কারণ অনুসদ্ধানে কয়েকটি দেশে বিশেষ টিম পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসে, বিকাশসহ কয়েক মাধ্যমে দেশে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসছে। নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। হুন্ডি ঠেকাতে বিকাশের লেনদেন সীমা কমানো হয়। সতর্ক করা হয় বিকাশকে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে মাশুল বা সার্ভিস চার্জে বাংলাদেশের ভর্তুকি দেয়ার বিষয়টি আলোচনা করছেন অর্থমন্ত্রী। ভর্তুকি দেয়া হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে আরো বেশি রেমিটেন্স আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের প্রবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ বসবাস করেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সে দেশগুলোতে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। নির্মাণ কাজ কমায় শ্রমিকদের আয়ে ভাটা পড়ে। পাশাপাশি ডলারের বিপরতে টাকার দরপতন ও হুন্ডিকেও দায়ী করেন সরকারের নীতি নির্ধারক ও অর্থনীতিবদিরা।

রেমিটেন্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোকে দায়ী করছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি সম্প্রতি সংসদে বলেন, ‘অনেকে বেশি লাভের আশায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়, যে কারণে রেমিটেন্স কমেছে। বর্তমানে হুন্ডির ব্যবসা জমজমাট রূপ নিয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছর ধরে প্রবাসী আয় মাসে ১০০ কোটি ডলারের বেশি থাকলেও গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তা নেমে আসে যথাক্রমে ৯৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার ও ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে। এরপর জানুয়ারিতে ১০১ কোটি ডলার দেশে আসে। তথ্য বলছে, প্রবাসীরা গত এপ্রিল মাসে মোট ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এর আগের মাস মার্চে পাঠিয়েছিলেন ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। তার আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৯৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছিল, যা ছিল একক মাসের হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এর আগে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীরা মোট এক হাজার ২৮ কোটি ৭২ লাখ (১০.২৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। অথচ, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে দেশে এসেছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে এই ১০ মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। যার পরিমাণ হচ্ছে ১৯৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার

প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা প্রথম শুরু হয় ২০১৩ সালে। ওই বছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল। এরপর ২০১৪ সালে প্রবাসী আয়ে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে তা আবার ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে যায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব