দুর্নীতি বন্ধে কঠোর শাস্তি চান ব্যাংকাররা

  • জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০১৮, ১০:২৩ পিএম

ঢাকা: ব্যাংকিং খাত অন্য সাধারণ ইন্ডাস্ট্রির মতো নয়। এখানে সংকট সৃষ্টি হলে পুরো অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। ব্যাংকিং খাতের বড় ধরনের অনিয়ম এবং নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করতে না পারায় সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। কঠোর শাস্তি না হওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না।

এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর সব তথ্য। সাম্প্রতি সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে করা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর(ডিজি) আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ, চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত এ খোদা, ঢাকা ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, বিআইবিএমের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হুসাইন এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম শরিফুল ইসলাম।

অনিয়ম বন্ধ করতে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে কর্মশালায় অংশ নিয়ে আলোচকরা জানান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজি রাজী হাসান বলেন, টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৩ সালে কোর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে একটি গাইড লাইন করেছিল, যা এখনও সংশোধন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা প্রতিনিয়তই উন্নত করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইন মনিটরিংও করা হচ্ছে।

ঢাকা ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকে যে সব দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে, তার প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ঘাটতি। এক্ষেত্রে ব্যাংকের আইসিসি (ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স) বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাবে ব্যাংকিং খাতের এই দুরবস্থা। ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। ব্যাংকিং খাতের এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে পরিচালনা বোর্ড, ম্যানেজমেন্ট এবং শাখা ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে সৎ, যোগ্য এবং প্রশিক্ষিত জনশক্তি প্রয়োজন।

কর্মশালায় বিআইবিএমের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এখন যদি বলা হয়, পরিচালকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাহলে ব্যাপক হৈ চৈ পড়ে যাবে। কিন্তু, এটা করা উচিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ভাবতে হবে। যে কোনোভাবে পরিচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগকে স্বাধীনভাগে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে ভূমিকা রাখতে হবে। আইসিসিডিতে কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের আলাদাভাবে ইনসেনটিভ দিতে হবে।

এনআরবি ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসাইন বলেন, সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট এবং পরিচালনা বোর্ড ঠিক হলেই অনেক ভালো কিছু হবে। অডিট কমিটি এবং সিনিয়র ম্যানেজমেন্টকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বছর শেষে ব্যাংকগুলো যে মুনাফা বাড়ানোর চিন্তায় থাকে বা মুনাফার টার্গেট করা হয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেন না, ব্যাংকিং বিজনেস হলো জেনারেশন বিজনেস। এটা শর্ট টাইম বিজনেস না। বছর শেষে মুনাফা বাড়াতে গিয়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং কমপ্লায়েন্স রক্ষা করতে পারে না ব্যাংকগুলো।

ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম শরিফুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকিই হলো ক্রেডিট রিস্ক। আইসিসিডিতে (ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট) মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া কর্মকর্তারা এই বিভাগে কাজ করতে যাতে আগ্রহী হয়, তার জন্য তাদের ইনসেনটিভ দিতে হবে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

সোনালীনিউজ/তালেব