সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা

বৈষম্য কমাতে বাজেট প্রণয়নে নারীর অংশগ্রহণ আবশ্যক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৫, ২০১৮, ০৩:৩৫ পিএম

ঢাকা : নারী-পুরুষ বৈষম্য কমাতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক বলে অভিমত এসেছে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে।

রোববার (৩ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সেমিনারে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেন, জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়নে সরকার আন্তরিক। কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। জেন্ডারবিষয়ক বরাদ্দ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তারা।

‘নারীর প্রতি অসমতা দূরীকরণের প্রশ্নে নীতি, আইন ও বাজেট’ শীর্ষক এ সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান। বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. প্রতিমা পাল মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, বিআইডিএস’র সিনিয়র রিচার্স ফেলো ড. নাজনীন আহম্মেদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী।

আলাচনায় অংশ নেন প্ল্যানিং কমিশনের উপপ্রধান প্রদীপ কুমার মহোত্তম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমা মোবারক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ফাতেমা আক্তার ডলি, ঢাকা জেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকী নার্গিস, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের কর্মকর্তা হালিমা বেগম, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, কেয়ার বাংলাদেশ প্রতিনিধি নাদেরা খানম, জিআইজেড প্রতিনিধি রিয়াজুল হক এবং উন্নয়নকর্মী নাজনীন পাপ্পু, আজমল হোসেন, হেলেন লুৎফুন্নেসা ও চঞ্চনা চাকমা। সূচনা বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, বৈষম্যহীনতা মুক্তিযুদ্ধের একটি অঙ্গীকার। এটা জেন্ডার বাজেটের আদর্শিক দিক।

আর অর্থনৈতিক ও বাস্তব দিক হচ্ছে জনসংখ্যার ৫০ ভাগ নারীকে সমান নাগরিক ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার সমসুযোগ দেওয়া। কাজেই নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য বাজেটকে জেন্ডার সংবেদনশীল করতে হবে। এ জন্য বাজেট প্রণয়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। ড. সালাহউদ্দিন বলেন, নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সব নীতি ও বিধিবিধান প্রণীত হয়েছে। এসব নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত কয়েক বছর জাতীয় বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেটও ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু জেন্ডার বাজেটে কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নারীর ক্ষমতায়নের অভীষ্টের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়; যেমন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যেখানে নারীর জন্য উঁচু বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নারীর জন্য বরাদ্দ সামান্য।

প্ল্যানিং কমিশনের উপপ্রধান প্রদীপ কুমার মহোত্তম বলেন, আমাদের দেশে বাজেট করার ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যুগ্ম সচিব নাজমা মোবারক বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ হয় না। আবার যেটুকু হয়, তাও সময়মতো নারীরা পান না। তাই নীতিনির্ধারণে নারীদের আরো অংশগ্রহণ আবশ্যক।  

ড. প্রতিমা পাল মজুমদার বলেন, নারীর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অত্যন্ত জরুরি। অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, শুধু বাজেটে বরাদ্দ বা নীতি তৈরি করলেই হবে না, এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদানের স্বীকৃতি এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ড. নাজনীন আহম্মেদ কর্মপরিকল্পনার সংখ্যাগত অর্জনে বেশি মনোযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে গুণগত অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডলি বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলেও শুধু নারী হওয়ার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকী নার্গিস বলেন, দেশে নারীরা সারা দিন কর্মব্যস্ত থাকলেও সেগুলোর কোনো হিসাব জাতীয় বাজেটে আসে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই