বাজেট ২০১৮-১৯

সুদের চাপ বাড়াচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঋণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৫, ২০১৮, ০৩:৩৮ পিএম

ঢাকা : ২০১৫-১৬ অর্থবছর সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১১০ কোটি টাকা। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৩৬০ কোটিতে। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সুদ বাবদ ৪১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বাবদ ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরেই ৯ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা বাড়ছে সরকারের সুদব্যয়। শতকরা হিসাবে এ বৃদ্ধি প্রায় ২৪ ভাগ।

সূত্র জানায়, ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তুতির কাজ চলছে। আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে তা উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নতুন বাজেটের প্রায় ১২ শতাংশ ব্যয় ধরা হচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধে। নামমাত্র সুদে বিদেশি ঋণে গুরুত্ব কমিয়ে অভ্যন্তরীণ তহবিল থেকে বাড়তি সুদে ঋণ নেওয়ায় বছরের পর বছর এ খাতে ব্যয় বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, প্রায় ১২ শতাংশ সুদে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নেওয়ায় অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের দলিলের সঙ্গে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি শীর্ষক প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩০ কোটি আর বিদেশি ঋণের স্থিতির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।

একই অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ৩৫ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। মোট ঋণের সাড়ে ৩৭ শতাংশ বিদেশ থেকে এলেও এ খাতে সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে মোট সুদের মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশি সহায়তা ছাড়ে গতি না এলে অভ্যন্তরীণ তহবিলে চাপ বাড়তেই থাকবে। অভ্যন্তরীণ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণে একই পরিমাণের বিদেশি ঋণের তুলনায় ১০ গুণের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়। আর সঞ্চয়পত্রের ঋণে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সঞ্চয়পত্রের বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পাশাপাশি শুধু দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য এ সুবিধা চালু রাখার পরামর্শ দেন তিনি।  

সঞ্চয়পত্র থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করায় সুদ ব্যয় বাড়ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও উঠে এসেছে। সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এ খাত থেকে নেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও ১০ মাসে এ খাত থেকে একটি টাকাও সংগ্রহ করা হয়নি। উল্টো ২৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করেছে সরকার। সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করা হয়। অথচ ব্যাংকে আমানত করে বিনিয়োগকারীরা সুদ পেয়ে থাকেন ৬ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনছেন।

অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র না কিনলে সরকার ব্যাংক থেকে ৩ শতাংশের কম সুদে ঋণ নিতে পারে। অবশ্য নামমাত্র সুদের বিদেশি ঋণ ব্যবহারেও সক্ষমতা দেখাতে পারছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি সহায়তার পাইপলাইনে ৪ হাজার কোটি ডলার আটকে আছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ লাখ কোটি টাকা। চলমান প্রকল্পে গতি এনে বিপুল পরিমাণ সহায়তা পেতে পারে সরকার।

এ অর্থ ছাড় না হওয়ায় চড়া সুদের অভ্যন্তরীণ ঋণে ঝুঁকছে সরকার। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা ঋণের বোঝা কমাতে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়ে আসছেন। নিম্ন আয়ের সঞ্চয়কারীদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় এসব প্রস্তাব আমলে নিচ্ছে না সরকার। যদিও বাজেট সামনে রেখে আয়োজন করা বেশ কিছু আলোচনা সভায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই