বাজেট পর্যালোচনায় এফবিসিসিআই

ব্যাংকনির্ভরতা বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৮, ০৮:৫০ পিএম

ঢাকা : আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

তারা বলছে, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার কারণে সুদের হার বেড়ে যাবে এবং এতে কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগ কমে যাবে। এ ছাড়া ব্যাংকের সুদহার বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটিও ব্যাহত হবে।

শনিবার (৯ জুন) ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাজেট বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের মতামত তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এ সময় সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহসভাপতি মুন্তাকিম আশরাফসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বর্তমান শুল্কস্তর অব্যাহত রাখা, দেশের সম্ভাবনাময় ওষুধ শিল্প খাতকে শুল্ক সুবিধা দেওয়া, চামড়া শিল্পের জন্য পৃথক এইচএস কোড সৃষ্টি, পরিবেশ ও জ্বালানি সহায়ক হাইব্রিড গাড়িতে সম্পূরক শুল্ক হ্রাস, চাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে শুল্ক আরোপ, মুদ্রণ শিল্পে ব্যবহৃত ফ্ল্যাক্সো ও গার্ভিউর ইন লিকুইড ফরমের আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

অপরদিকে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের স্বার্থে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো উৎপাদনশীল অন্যান্য খাতের কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ, অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, পারকুইজিটের সীমা বিলোপসহ আরো বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য বেশকিছু ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। বাজেটে আমাদের যেসব প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি সেগুলো পুনর্বিবেচনার চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হবে। সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

আগামী বাজেটের যে আকার ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে অর্থবছরের শুরু থেকেই মনিটরিং করার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থ ব্যয় করতে না পারার কারণে প্রতিবছর বাজেট সংশোধন করতে হয়। এ জন্য বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তদারকের মান নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।  

শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যয় বাড়ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। গুণগতমান বজায় রেখে প্রকল্প বাজেটে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপক নিয়োগ প্রয়োজন। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ যেসব মেগা প্রকল্প রয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ভ‚মিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকলেও মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে, যা আমাদের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি-যাতে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বজায় থাকে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, যারা ব্যাংকের টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে দিয়েছে কিংবা লুট করেছে তাদের শাস্তি চাই। এফবিসিসিআই কোনো লুটেরা বা কারসাজি যারা করে তাদের পক্ষে অবস্থান নেয় না বলেও জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই