সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

জুলাইয়ে ব্যাংক খাত সংস্কার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৮, ০৩:১৬ পিএম

ঢাকা : নানা সমালোচনার মুখে আগামী জুলাই মাসে ব্যাংক খাত সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার (২৬ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন সংযোজন শিল্পে আরোপ হওয়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো হচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না। করপোরেট করহারেও কোনো পরিবর্তন আসবে না।

এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বুধবার (২৭ জুন) সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অর্থ বিল পাস হবে। আর আগামীকাল পাস হবে প্রস্তাবিত বাজেট।  

গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর গত ১৯ দিন বাজেটের নানা দিক নিয়ে সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কিছু বিষয়ে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেগুলো বেশি আলোচিত হয়েছে, এমন কিছু বিষয়ে পরিবর্তন হবে। ব্যাংক খাত সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক খাত নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি প্রস্তুত হচ্ছি। আগামী জুলাইয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

মুহিত বলেন, ব্যাংকের বিষয়ে সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ, সেটা হচ্ছে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে কিছু করতে হবে। ব্যাংক খাতে লুটপাট হচ্ছে না দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তবে এক্ষেত্রে একটা খারাপ দিক রয়েছে। সেটি হচ্ছে এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের সঙ্গে সমঝোতা করে ঋণ নিয়ে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে আমার ধারণা, আমি মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছি। কিন্তু এ বিষয়ে অন্য স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই জুলাই পর্যন্ত সময় লাগবে। ব্যাংক খাতের অরাজকতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যাংক খাত নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এটা থাকুক। এর প্রতিউত্তর আমি যথাসময়ে দেব। এ বিষয়ে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী জুলাইয়ে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসব।

অর্থ বিলে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী মুহিত বলেন, তালিকা করছি। কিছুই বড় না। বড় ধরনের পরিবর্তন কখনো হয় না। করপোরেট করহারেও কোনো ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, বুধবার (২৭ জুন) খুব উল্লেখযোগ্য দিন। এই বাজেট প্রস্তাবের পর প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার বক্তব্য রাখবেন। অনেকে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো বসে বসে তিনি শুনেছেন, নিশ্চয় এগুলো কাভার করবেন। তাছাড়া তার নিজস্ব মন্তব্যও পাওয়া যাবে।

ইন্টারনেট সেবার ভ্যাট কমার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোবাইলের জন্য আমার প্রস্তাবই ভালো। তবে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমার একটা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আরো কিছু প্রস্তাব ছিল। এগুলো প্রায়ই আমরা সংশোধন করব। এসব বিষয়ে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার খুবই খুশি। আইসিটির বেশিরভাগ ট্যাক্স পাঁচ শতাংশ, বাকিগুলো ফ্রি। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিরোধী দলের সমালোচনাকে ‘উগ্র’ আখ্যায়িত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সরকারের অংশ হয়েও বিরোধী দলের কিছু সদস্যের বক্তব্য দারুণ রকমের উগ্র। এটা যথাযথ নয় বলে আমার মনে হয়। কারণ তাদের মন্ত্রীরা আমাদের সঙ্গে বসে প্রস্তাবিত বাজেট পাস করেছে। সুতরাং এটা আমার একার বাজেট নয়। তিনি বলেন, আমি অধিকাংশ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলাম। তারা সংসদে এমন আচরণ করেছেন যে, তারা সরকারের কোনো অংশ নয়।   

প্রধানমন্ত্রী নতুন কী পরিবর্তন আনতে পারেন- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখনো আমি জানি না। আজকে (গতকাল) সন্ধ্যায় জানতে পারব। কারণ সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার এ বিষয়ে বৈঠক আছে। ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বাড়বে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখন বাড়ানো হবে না। করপোরেট ট্যাক্সে পরিবর্তন আনার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বুধবার (২৭ জুন) খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আগামীকাল (আজ) প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন। আর জাতীয় সংসদে ২৮ জুন বাজেট পাস হবে; ২৭ জুন পাস হবে অর্থ বিল। বাজেট পাসের তারিখ এগিয়ে আনা হলো কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, শনি ও রোববারে আর যেতে চাইনি। ২৮ তারিখে শেষ করে দেব। উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাজেটের পর একটু বিরতি রাখা। আমরা বাজেটের প্রথম সেশনে যখন বসি, তখনই এটা আলোচনা হয়েছে।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই