স্বর্ণ কেলেঙ্কারি নিয়ে যা বললেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০১৮, ০১:৩৭ পিএম

ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বর্ণ কেলেঙ্কারির বিষয়টি অস্বীকার করলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী। তবে এ বিষয়ে কারও গাফিলতি পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বুধবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদি ঘুণাক্ষরেও ঘটে থাকে তবে সেটা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন। আপনাদের ধন্যবাদ, যে আগ্রহ আপনারা দেখিয়েছেন সেই আগ্রহের জন্য। আগামীতে আরও যতো তথ্য আমরা পাবো সেটাও সময়মত আপনাদের জানাবো। আমরা গোটা ব্যবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করবো। আজকে তাদের মধ্যে একসঙ্গে মিটিং হয়েছে। ফিরে গিয়ে তারা আরও বসবেন, আরও কথা বলবেন এবং এই যোগাযোগ আগামীতে আরও ঘনিষ্ঠ হবে।’

এক সংবাদকর্মী প্রশ্ন করেন, আপনি বলছেন, যেই পরিমাণ আমরা আশঙ্কা করছি সেই পরিমাণ না। বলছেন, ৪০ (40) এর জায়গায় ৮০ (80)। দেশের সর্বোচ্চ একটি জায়গা, সেখান থেকে তথ্যের এমন গরমিল হয়ে বাইরে যাওয়া এবং কেউ জেনে যাওয়া, সেক্ষেত্রে এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা ছিলেন তাদের উদাসীনতা কিনা বা অন্য কোন কিছু কিনা সে বিষয়টি আপনারা খতিয়ে দেখছেন কিনা?

জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা মোটেও নেই। ছয় স্তরের নিরাপত্তা এখানে আছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও সিস্টেমের বাইরে ভল্টে যেতে পারেন না। দুই তিন জায়গায় ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যেতে হয়। আর আমাদের তো প্রশ্নই উঠে না। আপনারা নিশ্চিত থাকবেন যে, কিছু বাইরে যাই নাই। যে সামান্য ফরটি/এইটটি, এটা হতে পারে। আমিও মাঝে মাঝে ইংলিশ এইটটি থেকে বাংলা ফরটি লিকতে গেলে গণ্ডগোল হয়ে যায়, আপনাদেরও মাঝে মাঝে হতে পারে। তবে আমরা বিষয়টাকে ছোট করে দেখছি না, এটা নিশ্চিত থাকেন। সামান্য ফাঁক দিয়েও কিন্তু বড় হয়ে যায়।

সুতরাং, আমি আমার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো এবং এটাকে আমাদের লেভেলে অথবা অন্য কোন সংস্থাকে দিয়ে আরও অধিক পর্যালোচনা করবো। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ভীত নয়। তাদের গভর্নর বলে গেছেন, আপনারা যাকে দিয়ে দেখাবেন দেখান। আমাদের তরফ থেকে কোনো সংশয় নেই, সবকিছু ঠিকই আছে। জনগণের যেটা জানানোর দায়িত্ব, তাদের সম্পদ বাংলাদেশ ব্যাংকে ঠিকই আছে, সঠিক আছে। আর আপনি (সাংবাদিক) যেমন বললেন, এমন একটা ঘটনা, সামান্যতম কেন হলো, এটা আমরা স্বীকার করি, এটা আমরা দেখবো।

রাজস্ব বোর্ডের প্রতিবেদনের (যে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বর্ণ কেলেঙ্কারির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিবেদন করে) বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছে। সেগুলো এখনও দেখার সময় পাই নাই। আমরা যেটা দেখেছি, গতকাল তারা একটা প্রেস স্টেটমেন্ট দিয়েছে। গভর্নর সাহেব এখানে ছিলেন, তিন মৌখিক যেটা বলে গেলেন, আমরা রিপোর্ট দেখেছি, এগুলোর উপর বিবেচনা করেছি। সব কাগজ দেখার মতো সময় আমার ছিলো না।

দ্বিতীয়ত, এই ঘটনাটা ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই বছর ধরে আর আমি জানতে পেরেছি গতকাল। সুতরাং, আমি সম্ভবত আগাগোড়া জানতে পারি নাই। আমার সেটা জানার দরকারও নেই, আমি ওই লাইনে কাজও করি না। একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আছেন, তার অধীনে সচিবরা আছেন, তারা এটা দেখাশুনা করেন। সেখানে আমি নিজে কালকে মাত্র জানতে পেরেছি। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এটা জানানো হবে এবং আরও যা যা করার সেটা করা হবে।

তবে আশ্বস্তির ব্যাপার হলো, যে মাত্রায় এটাকে গতকাল এটাকে বলা হয়েছিলো সেই মাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয়। আমাদেরও কিছু বলার আছে এখানে।...

শুল্ক গোয়েন্দা এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেছে, এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বুঝতে পারলো না যে তাদের ভুল হয়েছে। পত্রিকার রিপোর্ট আাসর পর কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এক বছর যাবত অনেকগুলো চিঠি চালাচালি হয়েছে। এখানে কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও আছে। একটা লিখিত চিঠির জবাব দিতে লেগেছে এক দেড় মাস। এইগুলো কিছু গ্যাপ থেকে গেছে। তবে মূল বিষয় হলো, জিনিসটা সেভ। এটাই হলো আমার জানার বিষয়।’

যে কর্মকর্তা চল্লিশের জায়গায় আশি লিখলো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অবশ্যই, আমরা পুরো সিস্টেমটা পর্যালোচনা করবো। নিরাপত্তা, মাপজোকের সিস্টেম, ওখানে যারা কাজ করে, পুরো সিস্টেম আমরা পর্যালোচনা করাবো। রিভিউ করে আমরা যদি কারও সামান্যতম গাভিলতি পাই তাহলে আইনানুগ শাস্তির বিধান করা হবে।

সকালে সচিবালয়ে শুরু হয় এ বৈঠক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে স্বর্ণ গায়েবের অভিযোগের পর এ বৈঠক অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে এ বৈঠক ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণের বিষয়ে তদন্ত করে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, হাইকোর্ট থেকে আদেশ পেলেই আনবিক শক্তি কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে স্বর্ণের পরিমাণ জানানো যাবে।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দাবি, ২০১৭ এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গচ্ছিত ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ যাচাই করে দেখা যায় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের কয়েকটি স্বর্ণালঙ্কারে ৮০ শতাংশের বদলে স্বর্ণ রয়েছে ৪৬ শতাংশ। এতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে স্বর্ণ গায়েবের অভিযোগ সত্য নয়। বরং স্বর্ণের ওজন ও মান নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিকেলে মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে শুল্ক গোয়েন্দার দাবি, সব রকম নিয়ম মেনেই তদন্ত করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই