সুশাসন প্রশ্নে চাপে ব্যাংক এমডিরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০১৯, ০১:৪৯ পিএম

ঢাকা : হঠাৎ করে সুশাসন নিশ্চিত করার চাপে পড়েছেন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-এমডিরা। এই চাপ সামাল দিতে নানা কৌশল খুঁজছেন তারা। রাতারাতি নতুন সরকারের ঘোষণা মোতাবেক খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে হালনাগাদ তথ্য বেরিয়ে আসবে তাতে এমনিতেই খেলাপি ঋণ কমে যাবে।

সূত্রগুলো বলছে, খেলাপি ঋণ যাতে আর না বাড়ে তার জন্য সরকারের নীতি সহায়তা চান ব্যাংকের এমডিরা। খেলাপি গ্রাহক অনেক সময় আইনের আশ্রয় নিয়ে ঋণ আদায় আটকে দিচ্ছে। এর সুরাহা চান তারা। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকেও কয়েক দফা একই দাবি করেছেন তারা।  

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের নয়া রেকর্ড তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বছর ব্যবধানে বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তফসিলি ব্যাংকগুলো নানাবিধ পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত কমছে না খেলাপি ঋণ। ভোটের আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশকিছু গ্রাহক তাদের ঋণ নিয়মিত করেছেন। তাতে ইতিবাচক কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

কিন্তু ব্যাংকাররা বলছেন, ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। কারণ নতুন ব্যাংকগুলো নিজেদের আর্থিক অবস্থান ভালো দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিয়ে গ্রাহকের ঋণ নিয়মিত করে থাকে। ফলে বছরের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। তাছাড়া সরকারের মনোভাবের প্রকাশ ঘটাতেই কোনো কোনো ব্যাংক ফন্দিফিকির করবে।  

পাহাড় সমান খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ স্বাধীনতার পর এ যাবৎ কালে সর্বোচ্চ। রাইট অফ করা ঋণের পরিমাণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি দাঁড়াবে পৌঁছে দুই লাখ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মোতাবেক, ব্যাংক খাতের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। জুন প্রান্তিক শেষে ৫৭টি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৮০ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে বছর ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকের মালিক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। এই মনোভাবের কথা তিনি তাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, করণীয় ও কৌশল বের করতে ব্যাংকের এমডিরা পথ খুঁজছেন। সরকারের মনোভাবের কথা প্রধান নির্বাহীদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মালিকরা। ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবি এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এমডিদের নির্দেশনা দিয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে জানান, আমরা সরকারের মনোভাব ও ঘোষণার সঙ্গে একমত। আমরাও চাই খেলাপি ঋণ আর না বাড়ুক। তবে এখানে কিছু আইনি সংস্কার দরকার। এটি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই