রমজানে পণ্যবাজারে নাভিশ্বাস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ০১:২০ পিএম

ঢাকা : রমজানের বাজারে গিয়ে হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের। চড়া বাজারে ঠাঁই মিলছে না তাদের। সবজি থেকে ফল-মাংস, সবকিছুই চড়া। অনেকে বলছেন এ সময়টার জন্য বসে থাকে একাধিক সিন্ডিকেট। তারা মোক্ষম এ সময়ে ফায়দা হাসিল করে নেয়। আর এর জিম্মি হয় সাধারণ ক্রেতা। বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতা। আর লঙ্ঘিত হয় ধর্মীয় অনুভূতি।

এই রোজায় সংশ্লিষ্টরা গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৫ টাকা। কিন্তু কষ্টের বিষয়, কোনো বাজারেই এ দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে না। ভুক্তভোগী অনেকেই বলছেন শুধু মাংস নই, কোনো কিছুই নির্ধারিত দামে মিলছে না। সরকার কিংবা সংশ্লিষ্টরা দাম নির্ধারণ করলেও কেনার সময় বাস্তবতা এসে ধরা পড়ে। শোনা কিংবা দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের নানা অজুহাত। হয়তো তাই বাস্তবতা। আর এ বাস্তবতা মেনেই কষ্টে বাজার করেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন গরিব হওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে বিষোদ্গার করেন দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থার।

সরেজমিন শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে ৫৬০ টাকা কেজি দরে। পাশের দোকানে বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকা। খাসির মাংস ৭৫০ টাকা কেজি নির্ধারণ থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। এভাবে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাংস। এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বারবার শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি।

শুক্রবার রাজধানীর মুগদাসহ মতিঝিল, খিলগাঁও ঘুরে দেখা গেছে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ ছোলা, খেসারি, মসুর ডাল, বুট, পেঁয়াজ। কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। তবে বেড়েছে শসা ও লেবুর দাম। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য।

চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও মুনাফাখোরদের জেরে দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ বেশি থাকার পরও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

মালিবাগ বাজারে রাজু ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, বাজারে দামের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি করছে ১৫০ টাকা। রাস্তার ওপারে একই মুরগি কেজি ১৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা হাসান জানান, একদিনে ব্রয়লারের দাম কমেছে ৩০ টাকা। মঙ্গলবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা দরে। আজকে পাইকারি বাজারে দাম কমেছে, তাই ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। পাশেই ১৫০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে। ওই বিক্রেতার দাবি খরচ বেশি তাই দাম বেশি নিচ্ছেন।

রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ছোলা, খেসারি, মসুর ডাল, বুট, পেঁয়াজ। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ৩০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১৮ থেকে ২৪ টাকায়।

বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবু হালি মানভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

প্রতি কেজি বেগুন, কচুরলতি, করলা, পটোল, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। ধুন্দল, ঝিঙা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি আঁটি লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লালশাক, পালংশাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁইশাক ও ডাঁটাশাক ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রোজায় বেড়েছে সব ধরনের মাছের দামও। হাউসে রাখা জীবন্ত রুই-কাতলা কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০, আইড় ৪০০-৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৪৫০-৫০০, বেলে মাছ প্রকারভেদে ৪০০-৬০০ টাকা, বাইন মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৫০০-৮০০ টাকা, পুঁটি ২০০-২৫০ টাকা, পোয়া ৪০০-৬০০ টাকা, মলা ৪০০-৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-৭০০, দেশি মাগুর ৫০০-৭০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৫০-১৮০ টাকা, চাষের কৈ ২০০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

খিলগাঁওয়ের মাছ বিক্রেতা হাবিব জানান, ঘূর্ণিঝড় ও গরমে মাছ সরবরাহ কিছুটা কম। তাই আড়তে মাছের দাম বেশি। বেশি দামে কেনা, তাই বিক্রিও করছি বেশি দামে। গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের মাছই কেজিতে ২০/৫০ টাকা বেড়েছে।

এদিকে হালিতে ৫ টাকা কমে ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকায়। এ ছাড়া দেশি মুরগির ডিম ৫৬ থেকে ৬০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই