জাবির সেই অধ্যাপকের বরখাস্ত কার্যকর

  • জাবি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০১৯, ০৪:৫৭ পিএম

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাপত্রে জালিয়াতি অভিযোগে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আমির হোসের ভূইঁয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা থেকে এই বহিষ্কার আদেশ প্রদান করা হয়। গত ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ১৯ আগস্ট থেকে এই আদেশ কার্যকর হওয়ার কথা জানানো হয়। 

অফিস আদেশে বলা হয়, অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আনিত জালিয়াতির অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ১০ (ক) (২) ধারা অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি জীবিকানির্বাহ ভাতা হিসেবে সর্বশেষ মূল বেতনের অর্ধেক পাবেন বলেও জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলের ভ‚গর্ভস্থ জলাশয়ে
সমুদ্রের নোনা পানি প্রবেশের প্রভাব নিয়ে ২০১২ সালে একটি গবেষণা করে পরমাণু শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ২০১৭ সালে ওই গবেষণার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে নতুন একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থী এসএম দিদারুল ইসলাম। এতে সহগবেষক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আমির হোসেন ভূইয়াসহ তিনজন। পরমাণু শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য ভ‚তত্ত¡বিদ রতন কুমার মজুমদার তাদের বিরুদ্ধে গবেষণাপত্র জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। রতন

কুমারের অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৭ সালে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেট। তদন্তে জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ৩ আগস্টের সিন্ডিকেট অধ্যাপক আমির হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। সেই সাথে অধিকতর তদন্তের জন্য উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি স্ট্রাকচার কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক আমির হোসেন ভূইঁয়া বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অনাকাঙ্খিত। আমি অনেক জাতীয় ও আন্তজার্তিক পুরস্কারপ্রাপ্ত। আন্তজার্তিক অনলাইন
জার্নালে আমার ৭০টিরও বেশী প্রকাশনা রয়েছে। একটা ছাত্র একটি গবেষণাপত্রে অনুমতি ছাড়া সহলেখক হিসেবে আমার নাম প্রকাশ করেছে। অথচ তারা অনার্স-মাস্টার্সে অধ্যাপক জামাল উদ্দীন ও এম.ফিলে অধ্যাপক হাফিজের ছাত্র ছিলো। আমার কাছে এই ঘটনা একটা দূরভিসন্ধি বলে মনে হয়। কারণ ২০১৭ সালে মে মাসে আর্টিকেলটা তুলে নিলেও পরবর্তী মাসের ২২ জুন তদন্ত অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়া আমার ব্যক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে সিন্ডিকেট যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা নজিরবিহীন।অন্যান্য গবেষকদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আমাকে টার্গেট করেছে।’

কিন্তু জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশের আগে লেখকদের কাছে মেইল আসার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া এস এম দিদারুল ইসলামের সাথে অধ্যাপক আমির হোসেনের ১১টি যৌথ প্রকাশনা রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোন মেইল আসেনি। হয়ত ভুল আইডি ব্যবহার করা হয়েছে।’ 

তার ছাত্র তার সাথে কেন দূরভিসন্ধি করবে এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন এখানে রতন কুমার মজুমদাদের ‘ষড়যন্ত্র ’ রয়েছে। এদিকে এই অফিস আদেশ বিভাগের পৌঁছানোর পর বিভাগের
নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অধ্যাপক এইচ এম সা’দৎ।

জানা যায়, অধ্যাপক আমির হোসেন ভূইঁয়া বিভাগের সভাপতির পাশাপাশি স্নাতকোত্তর ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। তিনি বিভাগের চারটি কোর্স পড়াতেন পাশাপাশি তার অধীনে ১৪ জন শিক্ষার্থী গবেষক হিসেবে কাজ করছে। 

এসবের ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাইলে নতুন সভাপতি অধ্যাপক এইচ এম সা’দৎ বলেন, ‘ আমরা বিভাগের মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিবো। যেহেতু হঠাৎ করে ঘটনাটি ঘটল সেহেতু সমস্যা তো একটু হবেই। আগামী মাসে বিভাগের মিটিং ডেকে একটা ফর্মূলা বের করার চেষ্টা করব। আমরা অবশ্যই শিক্ষার্থীরা যেন কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখব।

অন্যদিকে, প্রাণ রসায়ন ও ফার্মেসী বিভাগের একই ধরনের জালিয়াতির উঠে ২০১৫ সালে। এছাড়া আইআইটি বিভাগ ও ইংরজি বিভাগেও রয়েছে গবেষণাপত্রে জালিয়াতির অভিযোগ। এসব অভিযোগে আজ পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অন্যদিকে মূল লেখককে শাস্তির আওতায় না এনে শুধু আমির হোসেনকে শাস্তি দেওয়াকেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছে শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ইতিমধ্যে এই ঘটনায় নিন্দা
প্রস্তাব এনেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা বলেন,সিন্ডিকেট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পক্ষপাতমূলক। একই অভিযোগে এক একজনকে এক একরকম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমরা এটার প্রতিবাদ করেছি।’ অন্যদিকে অভিযুক্তের পক্ষ থেকে ভিসি বরাবর সিদ্ধান্ত রিভিউ করার আবেদন করা হয়েছে।
 
সোনালীনিউজ/এমএএইচ