তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

শ্রেণিকক্ষে দায়সারা পড়াশোনা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০১৯, ০১:৩১ পিএম

ঢাকা : প্রাথমিক শিক্ষায় তদারকি ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তদারকি ও নজরদারি ঘাটতিতে প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়ানো যাচ্ছে না। অথচ ক্ষমতাসীন সরকারের টানা ১১ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা মিড ডে মিল পাবেন সরকারিভাবে।

সবকিছু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকেন্দ্রিক। মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের ক্ষমতা নেই। ফলে তারা শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে আন্তরিক হচ্ছেন না। ফলে সংখ্যা তাত্ত্বিক অগ্রগতি হলেও মানোন্নয়নে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যালয়গুলোতে তদারকি ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

সোনালীনিউজ-এর সঙ্গে আলাপকালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় পরিসর প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু এটি এত বেশি কেন্দ্রীভূত, ভাবা যায় না। কুড়িগ্রামের প্রান্তিক কিংবা চর এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ও চলে ঢাকার মিরপুরের সিদ্ধান্তে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার তদারকি বাড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর ক্ষমতা দিতে হবে। প্রয়োজনে তারা যাতে অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে তার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এ কাজে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার লোকজনকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। শিক্ষকরা অনেকেই খামখেয়ালিপনা করে থাকেন। শৃঙ্খলায় চলেন না। প্রভাব দেখিয়ে শৃঙ্খলা ভাঙছেন অনেকে। এসব শৃঙ্খলা ফিরলে মান বাড়বে।

জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটির সভাপতি  মো. আফছারুল আমীনের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এ কে এম শাহাজাহান কামাল, ফজলে হোসেন বাদশা, মো. আবদুস সোবহান মিয়া এবং গোলাম কিবরিয়া টিপু বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

জানা গেছে, ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কারিকুলামে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, নির্ধারিত সিলেবাস শ্রেণি কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে না। ফলে অনেক অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছেন প্রতিযোগিতায়।

প্রতিটি শ্রেণিতে প্রতিবছরের জন্য নির্ধারিত সিলেবাস শ্রেণি কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হয় না বলে তারা পরীক্ষায় ভালো করতে পারছে না। মাঠ প্রশাসন হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। তারা বেশিরভাগ সময়ই শহরে থেকে কাজ করেন। বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন শুধু রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিটি উপজেলায় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম আরো ফলপ্রসূ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সূত্রমতে, সারা দেশে এখন প্রায় সোয়া লাখ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

তবে বেসরকারি হিসাব বলছে, এখনো প্রাথমিক বিদ্যালয় বয়সী ৪৬ লাখ শিশু রয়েছে পড়ালেখার বাইরে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলেমেয়েদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো এবং সমতা তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

সফলতার দিকগুলো হলো, সব শিশুর প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া, শ্রেণিকক্ষে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠা এবং অতি উচ্চহারে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শেষ করা।

ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষার মান। নিম্নমানের কারণে শিশুরা উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় এবং একপর্যায়ে ঝরে পড়ে। পূর্ণ যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং দুর্বল তদারকি-এসবই শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বহু বিদ্যালয়ে ধারণক্ষমতার চেয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। এর কারণে শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠানই দিনে দুই শিফট চালায়। শিক্ষকদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, তাদের ওপর নজর রাখা এবং জবাবদিহির ঘাটতিও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

কিন্তু প্রাথমিকে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ হলেও মাত্র ৬৭ শতাংশ বা তার চেয়ে কম হারে শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের যোগ্যতা অর্জন করে। আর উচ্চশিক্ষায় পৌঁছায় মাত্র ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা বর্তমানের পঞ্চম থেকে বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যাতে নিয়ে যাওয়া হয় সেই ব্যবস্থার জন্যও চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক শিক্ষার সীমা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গেলে প্রান্তিক শিশুরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষায় জবাবদিহি বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর সামর্থ্য বাড়াতে এবং উন্নততর পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য ডেটার ব্যবহার করতে হবে।

রিপোর্টের বিষয়ে আলোচনা করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেনের ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই