ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রত্যাশা প্রাপ্তির ৪১ বছর

  • ইবি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২০, ০৫:০৬ পিএম

ঢাকা : শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির বহু মনীষীর স্মৃতি বিজড়িত ভূমি কুষ্টিয়া। লালন থেকে রবীন্দ্রনাথ; মীর মশাররফ থেকে কাঙাল হরিনাথ। প্যারী সুন্দরী, আব্দুল জব্বার কিংবা রোকনুজ্জামান দাদাভাই সহ অনেক প্রবাদপ্রতিম মানবের স্মৃতিধন্য শহর কুষ্টিয়া। দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত এই জেলাতেই ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা পায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী নিভৃত দুটি গ্রাম শান্তিডাঙা-দুলালপুরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপিঠের। স্বাধীন বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি এবছর তার জন্মের ৪১ বছর পূর্ণ করলো।

সবুজে ঘেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। দেশের গণমানুষের চাহিদা পূরণে তৎকালীন সরকার ১৯৭৬ সালে ১লা ডিসেম্বর ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পরে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

পরবর্তীতে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০ (৩৭)’ পাস হয়। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে ১৭৫ একর ভূমির ওপর ৮টি অনুষদ, ৩৪টি বিভাগ, ১টি ইনস্টিটিউট, ১টি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী এবং সাড়ে চার’শ শিক্ষক নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘ধর্মতত্ব’ অনুষদের অধীনে ডিগ্রী প্রদান ছাড়াও নৈসর্গিক সুন্দর ক্যাম্পাসের জন্য স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের কোলঘেষে গড়ে তোলা ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক হয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধুর সুবিশাল ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’।

সেখানে দাঁড়িয়ে ডানে তাকালেই মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্ত বাংলা’ আর বাঁয়ে সততার স্মারক ‘সততা ফোয়ারা’। পাশেই ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার আর স্বাধীনতাযুদ্ধ সহ অন্যান্য শহীদের স্মরণে নির্মিত ‘স্মৃতিসৌধ’। এইতো গেল কৃত্রিম সৌন্দর্যের কথা। ম্যুরাল পেরিয়ে একটু পা বাড়াতেই বিস্তৃত সবুজে ঘেরা ‘ডায়না চত্বর’। ‘ক্যাম্পাসের প্রাণ’ এই চত্বরটি শিক্ষার্থীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে দিন-রাত।

ডায়না থেকে বাঁ দিকে শিক্ষার্থীদের আসাসিক হল, আর ডানে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটরি। এ দুয়ের মাঝেই একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভববসমূহ। ক্যাম্পাসের পশ্চিম কিনারে ছাত্রীদের হল ঘেঁষে বয়ে গেছে মনোরম ‘লেক’। দিনের ভাগে শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখর একাডেমিক এলাকা; আর বিকেল থেকে সন্ধ্যার কোলাহল লেক পাড়ে। ক্যাম্পাসের নিত্যদিনের এমন প্রাণচঞ্চল দৃশ্যগুলো যে কারো মন কাড়তে বাধ্য।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে চার দশক পার করে ফেললো শতভাগ আবাসিকতার মহাপরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব কষতে গেলেÑ প্রত্যাশার পাওনা এখনো ঢের বাকি। অধরায় রয়ে গেছে বহু স্বপ্ন। লম্বা এ সময়ে বহু জল গড়িয়েছে পদ্মা মেঘনা যমুনার। কালের বিবর্তনে একসময়ের সেশনজটের যাতাকলে পিষ্ট বিভাগগুলোতে কিছুটা গতিশীলতা এসেছে। ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে সংস্কৃতির ঝিরিঝিরি হাওয়া।

বাঙালি জাতির রক্তাক্ত ইতিহাসের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গ্রন্থাগারে চালু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, একুশ ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার। বেড়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন। ৫৩৭কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পে ৯টি ১০তলা ভবনসহ ও ১৯টি ভবনের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। যা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে স্বপ্নের অনেকটাই পূর্ণতা পাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবার নানান উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরাও মেতে উঠেন সেই আনন্দে। ক্যাম্পাসের ভবনে ভবনে রঙবেরঙের বাতির ঝলমলে আলো আর রাস্তার দু’ধারে রঙিন পতাকা উড়ার পতপত শব্দে সেই আনন্দের ধারা যেন বেড়ে যায় বহুগুণ। তবে বিশ্বব্যাপি কোভিড মহামারীর কারণে এবার সেই আনুষ্ঠিকতা অনেকটাই নিষ্প্রভ। তবু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেমে নেই সেই আনন্দ-উল্লাস। ক্যাম্পাসের লোগো সম্বলিত বিভিন্ন রঙের ফ্রেমে নিজেদের প্রফাইল ছবি আবদ্ধ করছেন নবীন-প্রাক্তণরা। স্মৃতিচারণ করে প্রকাশ করছেন অনুভূতি, লিখছেন স্ট্যাটাস।

এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুণগত শিক্ষা ও মৌলিক গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রধিকার দিবেন। শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারিদের ফলপ্রসু কর্মশালার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগী করে গড়ে তুলবেন। দলীয় সংকীর্ণতার বাইরে বেরিয়ে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করবেন।

বিভাগগুলো থেকে প্রকাশিত জার্নাল নিয়মিতকরণ, মৌলিক আর্টিকেল প্রকাশ এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন। সর্বোপরি, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী একটি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের উপহার দিবেন।

প্রাণের ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠার এই আনন্দময় লগ্নে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ প্রতিষ্ঠাবাষির্কী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই