ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে চাকসু নির্বাচন আজ

  • জেলা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদের নির্বাচন। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এবারের নির্বাচন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে অত্যাধুনিক ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে, যা ভোটের স্বচ্ছতা ও দ্রুত ফলপ্রকাশ নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্যালটে থাকছে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন শনাক্তযোগ্য কোড, যা ওএমআর মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে মোট ১৫টি ভোটকেন্দ্র এবং ৬১টি ভোটকক্ষ। প্রতিটি কক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ জন করে ভোটার ভোট দিতে পারবেন।
চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য প্রার্থী সংখ্যা ৪৯৩ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬।

ভোটাররা নির্ধারিত পেন দিয়ে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে বৃত্ত পূরণ করে ভোট দেবেন। একাধিক বৃত্ত পূরণ করলে সংশ্লিষ্ট ভোট বাতিল হবে।

চাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মোট ১৩টি প্যানেল। এর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র শিবির, বাম জোট, বৈচিত্র্য ঐক্য, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস এবং 'অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য' নামে সুফীপন্থী একটি জোট। রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।

নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস, রিজার্ভ ফোর্স, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরা।

মাঠে থাকছেন পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১,০৫০ জন পুলিশ সদস্য এবং র‍্যাবের সাইকেল ইউনিটের ৪০ জন। প্রয়োজনে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

প্রত্যেক ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে তিন স্তরের নিরাপত্তা তল্লাশি অতিক্রম করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।”

ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে শিক্ষার্থীদের বৈধ আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক পে-স্লিপ দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
ভোটারদের হাতে দেওয়া হবে পাঁচটি ব্যালট পেপার—একটি চাকসুর জন্য এবং বাকি চারটি হল ও হোস্টেল সংসদের বিভিন্ন পদের জন্য। গোপন কক্ষে নির্ধারিত সংখ্যক বৃত্ত পূরণ করেই ভোট সম্পন্ন করতে হবে।

ভোট শেষে বিকল্প পথ দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে, যাতে কেন্দ্রের আশপাশে ভিড় না হয়। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের ভদ্রতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে ভোট প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে।

নির্বাচন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১১ বার চলাচল করবে শাটল ট্রেন, যার প্রথমটি চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছাড়বে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। শেষ ট্রেন ছেড়ে যাবে রাত ১০টা ১০ মিনিটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ১০টি বাস ছাড়াও সকাল ১০টায় যুক্ত হবে ৫টি অতিরিক্ত বাস। ক্যাম্পাস থেকে ফেরার বাস ছাড়বে বিকেল ৩টা, ৪টা ও সাড়ে ৫টায়।

তিন দশক পর অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিসরে নতুন অধ্যায় যোগ করবে বলে প্রত্যাশা করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।

এম