সরকারি আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিলেও নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ফের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছেন প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা। তারা জানিয়েছেন, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলমান কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি একসঙ্গে চলবে।
আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় অর্থসচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে নয়টায় সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে শিক্ষক নেতারা প্রথমে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।
বৈঠকে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ জানান, বৈঠকে তিনটি মূল দাবি উত্থাপন করা হয়—
১️. সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা,
২️. চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন,
৩️. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির ব্যবস্থা।
তিনি জানান, মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে বিষয়গুলো দ্রুত অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ আশ্বাসের ভিত্তিতে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়, তবে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠপর্যায়ে অবস্থানরত শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে।
রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে। কর্মবিরতি স্থগিতের কোনো ঘোষণা আমরা দিইনি; কেউ ভুলভাবে প্রচার করে থাকতে পারে।”
তিনি আরও জানান, সোমবার কেন্দ্রীয় অবস্থান কর্মসূচিতে লক্ষাধিক শিক্ষক যোগ দেবেন। “আমাদের ঐক্যই শক্তি, আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব,” বলেন তিনি।
এর আগে শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে শাহবাগে ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচি থেকে মিছিল বের করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বহু শিক্ষক আহত হন। এরপর শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন এবং রোববার থেকে সারাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করলেও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড ১৩তম থেকে ১২তম করার প্রস্তাব দেয়। এতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে নামে, যা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এম