ইউনিভার্সিটির স্কুলিং মডেল বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন

  • কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশে থাকা স্কুলিং মডেল ও হাইব্রিড ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা অ্যাসোসিয়েশন, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ইউনিট। সাত কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বহাল রেখে অধিভুক্তির মাধ্যমে বিদ্যমান উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও মাস্টার্স শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সব টায়ারে যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করাও তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা বারোটায় কলেজের মূল ফটকে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।

মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজে ক্লাস শুরুর দাবিটি শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীদের একটি দিনও নষ্ট হোক, তা তারা চান না। শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে দ্রুত শ্রেণিকক্ষে ফিরুক-এটাই অভিভাবকদের মতো শিক্ষকদেরও প্রত্যাশা। তারা জানিয়ে দেন, ক্লাস নেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত।

শিক্ষকদের অভিযোগ, খসড়া অধ্যাদেশ তাদের সে এখতিয়ার দেয়নি। খসড়া অনুযায়ী নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও সাত কলেজের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে গণ্য নন। চূড়ান্ত অধ্যাদেশ, সিলেবাস ও প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারিত না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

শিক্ষকদের দাবি, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় মডেল সরকারি কলেজের সক্ষমতা সংকুচিত করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক সমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারি কলেজে আসনসংখ্যা কমে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে উচ্চ ফি–নির্ভর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, এতে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আরও বেড়ে যাবে। অথচ জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ উচ্চশিক্ষার প্রসার ও প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

শিক্ষকদের ভাষ্যে, দেশের ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও সিলেবাস, অবকাঠামো ও প্রশাসনিক কাঠামো চূড়ান্ত না করেই ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নজির নেই। আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একাডেমিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগেই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করারও এখতিয়ার কলেজ কর্তৃপক্ষের নেই। বিদ্যমান অনেক নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ভাড়া বাড়ি বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেই স্কুল সুবিধা। এমন পরিস্থিতিতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে হাইব্রিড ও স্কুলিংভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্তে গোষ্ঠীস্বার্থের প্রভাব থাকার আশঙ্কা তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

অংশীজনদের মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম শুরুর নোটিশ দেওয়া উদ্বেগজনক বলেও তারা মন্তব্য করেন। খসড়া অধ্যাদেশে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজগুলোর বিদ্যমান কাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখার কথা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির ভাষা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কাঠামো বিলুপ্তির আশঙ্কা তৈরি করেছে বলে তাদের দাবি।

মানববন্ধনে জানানো হয়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মাথাপিছু ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বঞ্চিত। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্যও তুলনামূলকভাবে বেশি বরাদ্দ রয়েছে। সাত কলেজসহ দেশের সব কলেজ শিক্ষার্থীর মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানো, আবাসন-পরিবহন সুবিধা উন্নয়ন এবং শিক্ষক সংকটসহ দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষকরা।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরের পদে স্থায়ীভাবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

১. ৪ ডিসেম্বর ২০২৫: সারা দেশের সরকারি কলেজে সর্বাত্মক কর্মবিরতি
২. ৬ ডিসেম্বর: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের দেশব্যাপী সমাবেশ
৩. ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫: কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ এবং সচিবালয়ের দিকে লং মার্চ
৪. সাত কলেজের প্রধান অংশীজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মতামত উপেক্ষা করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি হলে দেশের সব সরকারি কলেজ ও দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

এসএইচ