ছাত্রদল-শিবির দ্বন্দ্বে ব্যস্ত, চবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মাথাচাড়া 

  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৯:১৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল, বামপন্থী সংগঠন ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত সক্রিয় থাকার পাশাপাশি ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংগঠনটির পলাতক নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিকৃত ছবি সংবলিত পোস্টার সাঁটানোর ঘটনা ঘটেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. শামিম উদ্দিন খান। তার পদত্যাগের দাবিতে ১৫ ডিসেম্বর প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলনে নামে ছাত্রদল। এতে অংশ নেয় বামপন্থী কয়েকটি সংগঠনও। আন্দোলনে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।

পরিস্থিতি মীমাংসার উদ্যোগ নিতে গেলে উপাচার্য পরিষদ প্রতিনিধি ও ছাত্রশিবির নেতা ইব্রাহিম হোসেন রনির নেতৃত্বে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা রনির পক্ষে অবস্থান নেন। এর জেরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি তকিবুল হাসান চৌধুরী তকির নেতৃত্বে হাটহাজারী ও আশপাশের এলাকার ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক অবরোধ করেন। পরে বিজয় দিবসের মর্যাদা রক্ষার কথা বলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ঐক্য ভেঙে পড়েছে। একসময়কার ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য হারিয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ নিচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও পতিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা।

এতদিন চবি ছাত্রলীগের পলাতক নেতাকর্মীরা মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবরার শাহরিয়ার সবচেয়ে আলোচিত মুখ। পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে তার যোগাযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি আসামি হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরার ছবি নিয়মিত প্রকাশ করছেন তিনি।

একইভাবে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করলেও চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গোপনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুই নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আড়ালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সমন্বয় করছেন।

মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ব্যঙ্গাত্মক ছবি সংবলিত পোস্টার সাঁটানোর ঘটনায় এই দুই নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী জানান, ভোর চারটার দিকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একটি স্থানে বিকৃত পোস্টার সাঁটানোর বিষয়টি নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে ফেলা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে কয়েকজনকে দেখা গেলেও তারা মুখে মাস্ক ও গায়ে হুডি পরায় এবং কুয়াশার কারণে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, পলাতক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বারবার এমন কর্মকাণ্ডের সাহস পাচ্ছে।

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, এটি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পরিকল্পিত কাজ। সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কার্যকর বিচার না হওয়ায় তারা বারবার ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, পতিত সরকারের নিষিদ্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান।

এসএইচ