আধুনিক স্থাপত্যের গৌরবোজ্জ্বল নিদর্শন রাবি মসজিদ

  • রাবি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০১৭, ০৫:০৬ পিএম
ফাইল ফটো

রাবি: প্রায় চার দশক ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি ধর্মীয় অনুষ্ঠাদি পালন, ইসলামি জ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতি ও রাজনীতিচর্চা কেন্দ্র হিসেবে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি এর অনুপম স্থাপনা ও সুন্দর স্থাপত্য নকশা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য শোভাকে করেছে অতুলনীয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি উত্তরবঙ্গের গৌরবোজ্জ্বল ও মনমুগ্ধকর সুন্দর মসজিদ। ওপরে বিশাল গম্বুজ এবং একপাশে সুরম্য মিনারের সমন্বয়ে সুপরিসর ও নান্দনিক সুন্দর তুর্কি স্থাপত্য সমৃদ্ধ এই কেন্দ্রীয় মসজিদটি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন একর জায়গা নিয়ে ১৯৭০ সালের ১৩ এপ্রিল এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তৎকালীন ভিসি প্রফেসর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের নকশা প্রণেতা ‘থারিয়ানীর’ নকশার আলোকে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে। তৎকালিন সময়ে মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও কাজ শেষ করতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৮ লাখ টাকা।

এর মূল কাঠামো (৫০x৫০) গজ। এছাড়াও বারান্দা ও বারান্দার বাইরের যে অংশ রয়ে তা মূল কাঠামোর প্রায় দ্বিগুন। মূল ভবনের অভ্যন্তরে মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫শ’। বাইরের স্পেসসহ এই মসজিদে প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে নামায আদায় করতে পারে। এর পশ্চিম প্রান্তে মূল ভবন থেকে একটু আলেদা করে নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ মিনার। মসজিদের আঙ্গিনাকে মূল ক্যাম্পাস  থেকে পৃথক করার জন্য চারপাশে রয়েছে দৃষ্টি আকর্ষণীয় দেয়ালে ঘেরা ইটের বেষ্টনী।

সুন্দর ও সুপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে লাইটপোষ্ট। এর স্থাপত্যে শৈলীর সব থেকে আকর্ষণীয় দিক হলো সুবিশাল অভ্যন্তরীণ স্পেসে কোনো পিলার নেই। মূল কাঠামোর মধ্যবর্তী ওপরে রয়েছে বিশালাকার গম্বুজ। এর পুরো আঙ্গিনা জুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। দক্ষিণ পাশে রয়েছে ফোয়ারা, ওজুখানা, অফিস রুম, শৈাচাগার। দক্ষিন-পূর্ব প্রান্তে পেশ ইমামের বাংলো।

এছাড়া রয়েছে হরেক রকমের ফলের গাছ ও ঈদগাহ। শ্বেত-শুভ্র ঝাড়বাতিগুলো  এতোই মনোরম যে নির্মাণের প্রতিটি স্তরের সঙ্গেই তা একবারে মিশে গেছে। মসজিদটির অসাধারণ নির্মাণ শৈলী দেখলেই মহান আল্লাহল সম্মুখে মাথানত করার ইচ্ছা জাগে।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ঈমাম ছিলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা জামাল উদ্দিন। বর্তমানে পেশ ঈমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মো. নাসির উদ্দিন। তিনি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

মসজিদ পরিচালনার জন্য ১০ সদস্যবিশিষ্ট  একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। প্রতি দুবছর পরপর এই কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে এই কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব আছেন, পদার্থ বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড.এম. রফিকুল আহসান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্টার, রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. বেলায়েত হোসেন হাওলাদার, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড.এফ এম এ এইচ তাকী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মুহা. আশরাফ উজ জামান, আরবী বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুস সালাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চেধুরী, কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম এবং  মাদার বক্স হলের ইমাম।

কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ঈমাম ছাড়াও একজন মুয়াজ্জিন আছেন। তার নাম হাফেজ মুহাম্মদ শাহজুল ইসলাম। একজন ঝাড়ুদার একজন খাদেম ও ৩ জন মালিসহ  সর্বমোট ৬ জন সাধারণ খাদেম রয়েছে। এছাড়াও কবরস্থান তত্ত্বাবধায়নের জন্য একজন চুক্তি ভিত্তিক খাদেম রয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেন মসজিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এতকিছুর পরেও ঐতিহ্যের এই প্রাণকেন্দ্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে বলে জানান মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা। তারা বলেন, মসজিদের পাশেই রয়েছে শহীদ মিনার ও মুক্তমঞ্চ। প্রায় সময় আসর ও মাগরিবের সময় এই মঞ্চে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যার কারণে নামাজরত মুসল্লিরা মারাত্মক অসুবিধায় পড়ে যান।

এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট মুসল্লিদের দীর্ঘদিনের দাবি মাগরিব ও আসরের আজানের পরবর্তী ৩০ মিনিট মাইক বাজানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও তার কার্যকর ব্যবস্থা করা।

এ ছাড়াও এখানে শৌচাগার ও অযুর জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে তা মুসল্লিদের জন্য অপ্রতুল। শৌচাগারগুলোর অধিকংশই ব্যবহারের অনুপযোগী। অযুখানায় মাত্র ৪২ জন একসঙ্গে অযু করতে পারে। এই সময় দ্বিগুন মুসল্লিদেরকে অযু করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যার ফলে মুসল্লিরা জামায়াত নামায পড়তে পারেন না। এই জন্য মসজিদে ফোয়ারার চারপাশে অযুর করার ব্যবস্থা করলে সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে বলে জানান তারা।

একই সঙ্গে মসজিদ পাঠাগারটিকে আরো সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। বইয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে উন্নীতি করাসহ অধ্যায়নের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও যুগপযোগি করার দাবি মসজিদের ইমামের। এদিকে মসজিদের পাঠাগারটি আসরের নামাযের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খোলা থাকলেও জোহরের নামাযের থেকে এশার  নামাযের পূর্ব পর্যন্ত খোলা রাখার দাবি মুসল্লিদের।

এছাড়া জুম্মার নামাজে অতিরিক্ত মুসল্লিদের চাপে বারন্দায় যারা নামাজ আদায় তাদেরকে রোদে কষ্ট করে নামাজ আদায় করে। এক্ষেত্রে যদি বারন্দায় ছাদের নির্মাণ করা হয়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন মুসল্লিরা।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম