ডাকাতের কবলে ইবি শিক্ষার্থীদের অ্যাম্বুলেন্স

  • ইবি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮, ০৬:৩০ পিএম

ইবি : ডাকাতের কবলে পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৪টার দিকে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়কের বড়দা নামক স্থানে এ ডাকাতি হয়। বেশ কয়েকটি ট্রাকেও ছিনতাই করেছে। শিক্ষার্থীদের মারধর করে মোবাইল এবং সোনার গহনা ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা। এদিকে ডাকাতদের আটকের বদলে দূর থেকে বাঁশি বাজিয়ে ডাকাতদের পালাতে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ চাইলে ছিনতাইকারীদের আটক করতে পারত। এদিকে পুলিশ টহলে থাকলেও একই স্থানে বার বার ডাকাতি হওয়া নিয়ে পুলিশের দিকে আঙ্গুল তুলছে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা। আহত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

সোমবার রাতে আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্রী পলি হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে ইবি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় বান্ধবীরা। পরে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তাকে দ্রুত তার পরিবারের কাছে পাঠাতে বলা হয়। তৎক্ষণাৎ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সর মাধ্যমে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান। বান্ধবীকে নিয়ে তার ১২টার দিকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে অ্যাম্বুলেন্স। সহপাঠীকে হাসপাতালে রেখে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হয় বাকী শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য মতে, গাড়িতে আহমাদ শাহ মাসুদ, মুস্তাকিম ইসলাম, মিফতা জামান জান্নাত, মাহমুদা খাতুন এবং খালেদা জিয়া হলে দায়িত্বরত আয়া নাসিমা ছিলেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানাধীন গাড়াগঞ্জ এলাকার বড়দা নামক স্থানে পৌঁছালে হঠাৎ সামনে বেশ কিছু ট্রাক থেমে থাকতে দেখা যায়। জ্যাম ভেবে চালক ট্রাকের পেছনে গাড়ি থামিয়ে দেয়। থামানোর সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন লোক রামদা দিয়ে গাড়ির গ্লাসে আঘাত করতে শুরু করে। গ্লাস ভেঙ্গে শিক্ষার্থীদের গলায় রামদা ধরে মোবাইল, টাকা এবং কানের দুল ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।

এ সময় তারা গাড়ি চালককেও আঘাত করে। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সামনে দাঁড়ানো গাড়িগুলোতেও তারা ছিনতাই করেছে বলে মনে হয়েছে। ডাকাতির শেষ পর্যায়ে পুলিশ এসে দূর থেকে পুলিশের বাঁশির শব্দ শুনতে পেলাম। তখন ডাকাতরা পালিয়ে গেল। দায়িত্ব পালন না করে বাঁশি বাজিয়ে পুলিশ ছিনতাইকারীদের পালাতে সহযোগিতা করেছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। আমাদের ধারণা, পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের যোগসাজশ আছে বলেই তারা পালাতে পেরেছে। পুলিশ আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানাই। প্রশাসন আমাদের দ্রুত ক্যাম্পাসে চলে আসতে বলে।

ইবি প্রশাসনের মাধ্যমে ঝিনাইদহ জেলার প্রশাসন এবং সরকারের উচ্চ মহলের কাছে নিজেদের নিরাপত্তা এবং ঘটনার বিচার দাবি করে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে আরবী বিভাগ ও শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১টায় অনুষদ ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর দেড়টায় আহতদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান। সাংবাদিক সম্মেলনে অতি দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও বিচারের জোর দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে আহতদের ক্ষতিপূরণ ও মহাসড়কের বিপদজ্জনক এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের দাবিও করেন তারা।’

এদিকে গত ২৫ জানুয়ারী ইবি ভিসির গাড়িতে হামলার ঘটনা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। এরই মধ্যে আবারো হামলার স্বীকার হলো ক্যাম্পাসের অ্যাম্মুলেন্স। ভিসির উপর হামলার ঘটনা আসলে ডাকাতি কি না তা নিয়ে রীতিমত বিতর্ক থাকলেও সে ঘটনার কোন কুলকিনারা করতে পারেনি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন। অনেকে বলছে ভিসি ডাকাতদের ল্যাপটপ দিতে চেয়েছিল কিন্তু হামলাকারীরা তা নেয় নি। অন্যদিকে এই হামলায় শিক্ষার্থীদের কানের গহনা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছে।

গাড়ির চালক আব্দুল খালেক বলেন, ‘জ্যাম ভেবে ট্রাকের পেছনে গাড়ি থামাতেই তারা আঘাত শুরু করে। আমার শরীরেও আঘাত করেছে ছিনতাইকারীরা।’

ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘আরবী বিভাগ লিখিতভাবে বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনের কাজে এর বিচার চাইব। আগের ঘটনার বিচার হলে হয়তো আজকের এই হামলার ঘটনা ঘটত না।’

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ঝিনাইদহ জেলার এসপির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে ফোন রিসিভ করেন নি। পরে এসএমএস করলে রিসিভ করেন এবং কিছু না বলেই ফোন কেটে দেন।’

শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘বড়দায় একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা একজনকে আটক করেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে আটককৃতের নাম প্রকাশ করছি না।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর