ভুল অনুবাদে শিখছে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা!

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০১৮, ০২:০৫ পিএম

ঢাকা: ভুল অনুবাদে পড়াশোনা করছে দেশের ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা। অথচ ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভার্সনের বই নির্ভুল ও হুবহু অনুবাদ করার নিয়ম রয়েছে। যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দাবি, ‘সঠিক নিয়মেই সব হচ্ছে’।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ইংরেজি ভার্সনের বইয়ে প্রচুর ভুল থাকছে। পাশাপাশি অনুবাদেও থাকছে ত্রুটি। আবার কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ অংশ অনুবাদই হচ্ছে না। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা। বইয়ের সর্বত্রই যেন অযত্ন আর অবহেলার ছাপ।

তথ্য অনুযায়ী, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় বাংলা ভার্সনের বই থেকেই। পরে বাংলা ভার্সনের প্রশ্নপত্র অনুবাদ করা হয় ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য। বাংলা ভার্সনের বইয়ে আছে অথচ ইংরেজি ভার্সনের বইয়ে নেই এমন অনেক অংশ থেকেই পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন করা হচ্ছে।

ফলে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। এবার এসএসসি পরীক্ষায় এমন একাধিক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যা বাংলা ভার্সনে থাকলেও ইংরেজি ভার্সনের বইয়ে নেই।

নবম দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান। এটির ইংরেজি ভার্সন বই বায়োলজি। জীব বিজ্ঞানের ‘গ্যাসীয় বিনিময়’ অধ্যায়ের শ্বসনতন্ত্রের অংশে গলবিলের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এখানে তিনটি পৃথক বাক্য রয়েছে।

তৃতীয় বাক্যটিতে আলাজিহ্বা’র পরিচয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইংরেজি ভার্সনের বইয়ে তৃতীয় বাক্যটি নেই। অথচ এবারের এসএসসির প্রশ্নটি এসেছে তৃতীয় বাক্যটির ‘আলাজিহ্বা’ নিয়েই। ফলে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা এর উত্তর দিতে পারেনি।

একই বইয়ের চতুর্দশ অধ্যায়ের শেষ দিকে মত্স্য উন্নয়ন বিষয়ে বলা হয়েছে ‘মাগুর, কমন কার্প, লইট্টা এবং তেলাপিয়া মাছে স্যামন মাছের বৃদ্ধি হরমোনের জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে কৌলিগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় এসব মাছের আকার প্রায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। ’ কিন্তু এই অংশটি ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের জন্য অনুবাদ করা হয়নি।

তবে এবারের এসএসসির নৈর্ব্যক্তিক অংশের ২৫নং প্রশ্ন এই বাক্যটি থেকেই করা হয়েছে। ফলে উত্তর লিখতে পারেনি পরীক্ষার্থীরা। এছাড়া এই বইয়ে ‘পরিবেশ সুরক্ষার’ ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে ‘ইন ইমপ্রুভমেন্ট অব ফিসিং’।

এই বইটি বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন রজত কান্তি সোম, গুল আনার আহমেদ এবং কাজী নেয়ামুল হক। এর মধ্যে গুল আনার আহমেদ বাংলা ভার্সনের বইটিরও লেখক। এছাড়া রসায়নের ‘ক’ সেটের বাংলা ৬ নম্বর প্রশ্নের অনুবাদ ভুল হয়েছে।

গত বছর জেএসসির সৃজনশীল এ প্রশ্নপত্রের বহু নির্বাচনী (মাল্টিপল চয়েজ) অংশের প্রশ্নে একাধিক ভুল ধরা পড়ে।

ইংরেজি ভার্সনের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফরোজা আক্তার বলেন, ইংরেজি ভার্সন পাঠ্যবইয়ে ভুলের কথা এখন সর্বজনবিদিত। নিম্নমানের অনুবাদ, তাড়াহুড়ো করার কারণে প্রতিবছরই পাঠ্যবইয়ের ইংরেজি ভার্সনে ভুল থাকে। অসংখ্য বানান ভুল এবং বাক্যগঠনে অসঙ্গতির প্রমাণ মিলেছে প্রতিবছরই।

অথচ যারা এসব অনুবাদ করেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যারা ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ অনুবাদ করে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করছেন তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন এই অভিভাবক।

তিনি বলেন, প্রশ্নপত্রের এসব ভুলের জন্য ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা তো ‘অটো নম্বর’ পাবে না। কর্তৃপক্ষের ভুলে কেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি ভার্সনে পড়াশোনা করছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রচুর ভুল ও অসঙ্গতি আছে। এমন অভিযোগ পেয়েছি। প্রমাণও পেয়েছি। তবে আগামীতে যাতে এসব ভুল ও ত্রুটি না থাকে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। বই অনুবাদের জন্য আমরা ৬৫ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়োজিত করেছি।

তিনি বলেন, এসব ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ অনুবাদ যারা করেছেন প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। সূত্র: ইত্তেফাক


সোনালীনিউজ/জেডআরসি/আকন