চিরঘুমে শায়িত ফকির আলমগীর

  • বিনোদন প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২১, ০৫:৫০ পিএম

ঢাকা : রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর।

শনিবার (২৪ জুলাই) বেলা আড়াইটায় তাকে দাফন করা হয়। এর আগে খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ার মাটির মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দাফনের পর তার কবরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের পক্ষ থেকে ফুল শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সকাল ১১টায় খিলগাঁও পল্লীমা সংসদ মাঠে প্রথম জানাজার আগে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় স্বাধীন বাংলা বেতারের এই কণ্ঠসৈনিককে। পরে বেলা ১২টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে।

ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেই গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্কার্স পার্টি, শিল্পকলা একাডেমি, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ ছাড়া তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অনেকে শ্রদ্ধা জানান।

শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফকির আলমগীর। এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে হার্ট অ্যাটাক হয় তার। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে চিকিৎসাধীন ছিলেন এ সংগীতশিল্পী।

ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। অন্যান্য গানের মধ্যে ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’, ‘বনমালী তুমি’, ‘কালো কালো মানুষের দেশে’, ‘মায়ের একধার দুধের দাম’, ‘আহা রে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’ উল্লেখযোগ্য।

ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করতেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই