তিতা-মিঠার ফোক ফেস্টিভাল!

  • মিতুল আহমেদ, বিনোদন প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০১৬, ০৮:৫৫ পিএম
ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

ঢাকা: ‘সমস্যা যেটা আপনি 'ফোক' বলতে জারি-সারি- ভাটিয়ালি ইত্যাদিই বুঝতেছেন। এখনও’-বাংলা ফোক নিয়ে এটা রাজীব দত্ত নামের এক চিত্রশিল্পীর স্যাটায়ার? নাকি সত্যি সত্যিই তিনি ফোক-এর ব্যবহারিক দিক পরিবর্তনের ইতিবাচক কোনো অর্থের দিকে ইঙ্গিত দিলেন! যদিও সেটা পরিস্কার নয় তবুও এটা ঠিক যে ফোক বা লোকগান বলতে যে জারি সারি ভাটিয়ালি গানকে মানুষ বুঝে আসছে অনাদিকাল ধরে তা যেনো  সত্যি সত্যিই পরিবর্তন হতে চলেছে। অন্তত সদ্য সমাপ্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভাল এই ইঙ্গিতই দিয়ে আসছে গত দুই বছর ধরে। প্রথমবার ফোক ফেস্টিভাল আয়োজনের সময় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল স্কয়ার আয়োজিত ঢাকা ফোক ফেস্টিভাল। অনেক পন্ডিতজন সেসময় ফোকের সাথে ফিউশনের আপত্তির কথা তুলে আয়োজকদের তুলোধুনো করেছিলেন। তবে এবার এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগের কথা শোনা না গেলেও নানা ধরনের অসংলগ্নতায় পূর্ণ ছিল এবারের ঢাকা ফোক ফেস্টিভাল-এর আসর।

প্রথম দিনেই সিকিউরিটি নিয়ে ব্যাপক সজাগ ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে আয়োজকদের। ফলে একটু বেশি হয়রানির শিকার হতে হয়েছে দর্শকদের। যা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি।নিরাপত্তা হুমকি বিষয়ক কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন জিনিষ নিয়েও অসংখ্য দর্শককে হেনস্থা করা হয়েছে। সামান্য হেডফোন কারো সঙ্গে থাকলে সেটা নিয়েও প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয়নি। বরং সেটা একেবারে গচ্ছা দিয়ে তারপর ভেতরে ঢুকতে হয়েছে আগত দর্শকদের। এছাড়া সাউন্ডসহ যান্ত্রিক ত্রুটিবিচ্যুতি চোখে পড়েছে গোটা ফেস্টিভালজুড়ে। যা ফোক ফেস্টিভালের প্রথম আসরে খুবই কম ছিল। এমন তিতা মিঠার বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ফোক উৎসবে ছিল আরো কিছু চমকপ্রদ ঘটনা:        

‘আমি হইলাম লোক গানের রাজা’
অঘোষিতভাবেই বাংলা লোক গান বললে যা বোঝায় তার ধারক বাহক আব্দুল কুদ্দুস বয়াতি। তার জীবনাচরন ও গায়কী পুরোটাই গ্রাম বাংলা মিশে আছে। এবং একই সঙ্গে দেশে অতি জনপ্রিয়ও তিনি। অথচ ঢাকা ফোক ফেস্টিভালের প্রথম আসরেতো নয়ই বরং দ্বিতীয় আসরেও তাকে উপেক্ষা করেছে আয়োজকরা। আর তাকে উপেক্ষা করে যাওয়াটা যে মোটেও উচিত হয়নি সেটা বলার জন্য মুখিয়ে ছিলেন স্বয়ং আব্দুল কুদ্দুস বয়াতি। তাই ফোক ফেস্টিভালের শেষ দিনে আয়োজকরা তাকে না ডাকলেও ‘তাপস এন্ড ফ্রেন্ডস’-এর হয়ে মঞ্চে উঠেন তিনি। উঠেই বলে নিজের ভেতর পোষা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। আয়োজকদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি হইলাম লোকগানের রাজা আমারে উপেক্ষা করা কি ঠিক!

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে কুদ্দুস বয়াতির এমন রূঢ় সত্য উচ্চারণের সাথে সাথেই গোটা আর্মি স্টেডিয়ামে যেনো আয়োজকদের প্রতি এক ধরনের ঘৃণার ঝড় বয়ে যায় দর্শকের থেকে।   

আয়োজনে বিরক্ত ছিলেন পবন দাস?:  
প্রথম আসরে ঢাকা ফোক ফেস্টিভাল মাতিয়ে ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী পবন দাস। গেলবার লোক গানের ঘোরে বাঙালি দর্শকদের মগ্ন করে যাওয়ায় এবারের আসরেও যে তিনি আসবেন এটা নির্ধারিতই ছিল। এসছেনও। এমনকি এবারের আসরের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবেই তিনি ঢাকা ফোক ফেস্টিভালের শেষ দিনে মঞ্চেও উঠেছিলেন। কিন্তু এবার তাকে আর আগের বারের মতো উচ্ছ্বল দেখায়নি। মঞ্চে সারাক্ষণ কেমন যেনো এক ধরনের বিষণ্নতা দেখা গেছে তার মধ্যে। তিনি কি তাহলে ফোক ফেস্টিভালের আয়োজকদের প্রতি নাখোশ ছিলেন? নাকি তার আগের শিল্পীদের গরিমসি তার মধ্যে এক ধরনের বিরক্তির উদ্রেক করেছিল।    

এরকম প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারন ফোক ফেস্টিভালের শেষ দিনের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন পবন দাস। সাড়ে এগারোটার দিকে মঞ্চে উঠার কথা থাকলেও তিনি মঞ্চে উঠতে উঠতে বেজে যায় প্রায় দেড়টার মতোন। এর আগে অযথায় সময় নষ্ট করে দর্শকদের মনেও এক ধরনের বিরক্তি তৈরি করে একাধিক গানের দল। বিশেষ করে তাপস এন্ড ফ্রেন্ডস-এর প্রতি উপস্থিত দর্শকের ক্ষোভ ছিল দেখার মতো। কিন্তু তারপরও অসংখ্য দর্শক গভীর রাত পর্যন্ত বসে ছিল শুধু পবন দাসের পারফর্ম দেখার জন্য। দে দে পাল তোলে দে এবং দিল কি দয়া হয় না’র গান গেয়ে দর্শকদের প্রতি সেই ভরসার অবশ্য মূল্যও দেন তিনি।     

অর্ণব-অর্ক-পাপনের অনুপস্থিতি ছিল প্রবল:   
ফোক ফেস্টিভালের প্রথম আসরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ভারতীয় ফোক ফিউশনের অন্যতম জনপ্রিয় দুই শিল্পী অর্ক মুখার্জী ও পাপন। গেল বছরে ঢাকা ফোক ফেস্টিভালের আসর মাতিয়ে ছিলেন তারা। অর্ক মুখার্জীর সঙ্গে সত্যকি ব্যানার্জির যে মিউজিক্যাল ক্যামেস্ট্রি শ্রোতা-দর্শকরা উপভোগ করেছিলেন তা যেনো হারে হারে দ্বিতীয়।  টের পেলেন সদ্য সমাপ্ত আসরে।অন্যদিকে পাপনের অনুপস্থিতিও ছুঁয়ে গেছে দর্শকদের। দেশের জনপ্রিয় শিল্পী অর্ণবকেই বা কেনো এ আসরে নিয়ে আসা হলো না এ নিয়েও প্রশ্ন ছিল সাধারণ দর্শকশ্রেণির মনে।কিংবা জনপ্রিয় ফোকধর্মী গানের দল ‘জলের গান’-ই বা কেন থাকলো না!

ফোকের মঞ্চে দুই বোনের ঝড়:
ঢাকা ফোক ফেস্টিভালের প্রথম আসরেই বাংলাদেশ আসার কথা ছিল ‘নুরান সিস্টার্স’-এর। কিন্তু পারিবারিক কারণে গেলবার আর আসতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশে এসেই মাতিয়ে গেলেন বাংলার মানুষদের। মনে জায়গা করে নিল তাদের ঝড়ো পরিবেশনা।হয়তো এর আগে তাদের পরিবেশনা সম্পর্কে কল্পনাও করতে পারেননি বাংলার দর্শক!

‘নুরান সিস্টার্স’-এর দুই বোন জ্যোতি নুরান ও সুলতানা নুরান। ১২ নভেম্বর মধ্যরাতে তাদের গান আর পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয়েছেন স্টেডিয়ামের সব দর্শক। সুফি-কাওয়ালি ঘরানায় গানে মাতিয়ে দেন পুরো স্টেডিয়াম। শুধু যে গান পরিবেশনায় ছিল তা কিন্তু নয়, বরং গানের সাথে হাত-পা নেড়ে যেভাবে ঘোর তৈরি করে গানগুলো করেছেন তাতে খুব সহজেই উপস্থিত দর্শকেরা তার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। গানের মধ্যে একে একে গেয়েছেন আল্লাহু আল্লাহু, দয়াবান, ইয়ার থা দিওয়ানা, যুগ্লি পাটাকা গুড্ডি, এবং বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লার বিখ্যাত গান দমাদম মাস্ত কালান্দার। দুই বোনের লাইভ পারফর্মেন্সে গোটা স্টেডিয়াম সরগরম হয়ে উঠে।  


সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল