ঢাকা: সারা জীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চায় নিবেদিত প্রাণ এক অনন্য লেখক শওকত ওসমান। চিরন্তন বাঙালির সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগী এই লেখক ‘সবার উপর মানুষ সত্য/ তাহার উপর নাই’ আদর্শে শুধু পথ চলেননি; নিজের মননশীল ও সৃজনশীল জগতেও তার ছাপ রেখে গেছেন।
সোমবার (২ জানুয়ারি) ছিলো স্বদেশ প্রেমের নিমগ্ন এই মহৎ কথাশিল্পীর শততম জন্মবার্ষিকী। তার এই জন্মশতবার্ষিকী নানা সংগঠনের নানা আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো আলোচনা অনুষ্ঠান ও তার রচিত গল্প অবলম্বনে নির্মিত নাটক ‘বাঁধ’-এর বিশেষ মঞ্চায়ন।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) পৌষের হিমেল সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনের শুরুতেই অনুষ্ঠানস্থলে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং শওকত ওসমান স্মরণে প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলন করেন অনুষ্ঠানের অতিথি এবং আয়োজক প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অতঃপর শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান।
এই আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন-শওকত ওসমানের পুত্র বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
এছাড়াও লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এ আয়োজনে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমির চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) কবি নাসির আহমেদ।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শওকত ওসমান আমাদের পিতৃতুল্য ছিলেন, কিন্তু তিনি আমাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশতেন। আমরা যখন নাটকে অভিনয় শুরু করি, তিনি আমাদের খুব অনুপ্রেরণা দিতেন।
ইয়াফেস ওসমান বলেন, বাবা ছিলেন বটবৃক্ষের মতো। তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য পুরো জীবন ব্যয় করেছেন।
এ আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে শওকত ওসমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি কাজী রোজী, কবি মুহাম্মদ সামাদ, আসলাম সানী ও আনিস মোহাম্মদ।
এ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একই স্থানে প্রদর্শিত হয় শওকত ওসমানের লেখা গল্প অবলম্বেনে নির্মিত নাটক ‘বাঁধ’। শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজিত প্রযোজনাটির নাট্যরুপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ বারী।
নাটকের গল্পে দেখা যায়, প্রবল বন্যায় ভেসে যায় নিয়ামতনগর নামের একটি গ্রাম। এ অবস্থায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার মানুষ আশ্রয় নেয় একচিলতে সরু বাঁধে। সে বাঁধেও শুরু হয় ভাঙন, ফাটল। এর মাঝেই একইসঙ্গে চলতে থাকে পাড়ায় পাড়ায় সহমর্মিতা-সহযোগিতা এবং রেষারেষি ও লড়াই। পুনর্জাগরণের প্রত্যাশায় আশাবাদী ফজল, দুঃসাহসী ও স্পষ্টভাষী ময়না, বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ মাতবর চাচার সংগ্রামের ভেতরে উঠে আসে সংকটাপন্ন এক জাতির প্রতিচ্ছবি, যে জাতি একতাবদ্ধ হয়ে ভেঙে পড়া বাঁধটি পুনর্নির্মাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
শিল্পকলার প্রযোজনায় নাটকটিতে বিভিন্ন দলের নাট্যকর্মীরা অভিনয় করেছেন। মঞ্চ ও প্রকাশনা ডিজাইন করেছেন শাহীনুর রহমান। বাকার বকুলের কোরিওগ্রাফিতে সংগীত পরিকল্পনা করেছেন রিফাত আহমেদ। অম্লান বিশ্বাসের আলোক পরিকল্পনায় পোশাক পরিকল্পনা করেছেন এনাম তারা।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন