‘শাকিবের পরে নির্ভরযোগ্য শুভ’

  • বিনোদন প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০১৭, ০৯:৫৮ এএম

ঢাকা: ঢালিউড সিনেমায়  এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব করছেন শাকিব খান। সেরা অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। সুপারস্টার, কিং খান খেতাব গুলো যোগ হয়েছে তার নামের সঙ্গে। পেক্ষাগৃহের মালিকদের কাছে এই তারকার সিনেমা মানেই নিশ্চিন্ত নির্ভরতা, ব্যবসায়িক সফলতা।

শাকিবের নাম শুনেই সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ছুটে যান অনেক দর্শক। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এই নায়ক এরই মধ্যে পেরিয়েছেন দেশের সীমানাও। নিজ দেশের পাশাপাশি বাইরের দেশেও নিজের জনপ্রিয়তার কথা জানান দিতে সক্ষম হয়েছেন। কলকাতা আর দুবাইয়ে তাঁর সিনেমার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ তা-ই প্রমাণ করে।

দেশের সিনেমার প্রযোজক আর পরিচালকেরা শাকিবের পরবর্তী আরও কয়েকজন নায়কের খোঁজ করছিলেন, যাঁরা হয়ে উঠতে পারবেন যোগ্য উত্তরসূরি। হল মালিকেরাও শাকিবের পাশাপাশি অন্য নায়কের সিনেমা বিনা দ্বিধায় চালাতে পারেন, ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবেন সেই আশায় বুক বেঁধেছেন এত দিন। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দিয়ে দেশের সিনেমার নির্ভরযোগ্য সেই নায়কের অভাব ঘুচতে যাচ্ছে বলে পরিচালক, প্রযোজক, মালিকসহ অনেকেরই অভিমত।

দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তি পায় এই মাসের ৬ অক্টোবর। দ্বিতীয় সপ্তাহেও সমান তালে চলছে এই সিনেমা। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হওয়া দর্শক বলছেন, বহুদিন পর একটি ভালো মানের দেশি সিনেমা দেখেছেন তাঁরা। সিনেমার ব্যবসায়িক সফলতার পর দর্শকের পাশাপাশি সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, দেশের সিনেমায় আরিফিন শুভ সম্ভাবনার বড় জায়গাটা দখল করতে যাচ্ছেন।

এ নিয়ে চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেত্রী সারা বেগম কবরী বলেন, ‘আরিফিন শুভকে আমি প্রথম দেখেছি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনায়। প্রথম দেখায় মনে হয়েছে, তাঁর মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা আছে। এখন শুনছি, তাঁর ঢাকা অ্যাটাক সিনেমা ভালো ব্যবসা করছে। সবাই মিলে ওরা ভালো করুক। তবে ওদেরকে আরও সময় দেওয়া দরকার, শুধু একটা সিনেমা দিয়ে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছর ধরে আরিফিন শুভ সিনেমায় কাজ করছেন। এর আগে অগ্নি, পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি আর ছুঁয়ে দিলে মন দিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি। তাঁর জন্য ব্যবসায়িকভাবে একটা হিট সিনেমার দরকার ছিল। ‌‌‘ঢাকা অ্যাটাক’ দিয়ে তা পূরণ হয়েছে। আমার তো এও মনে হয়েছে শুভর সঙ্গে মাহি মিলে দারুণ রোমান্টিক জুটি গড়ে উঠতে পারে। আমি নিজেও ওদেরকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর জন্য মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

নওশাদ আরও বলেন, ‘শাকিব খান অনেক বছর ধরেই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন। একটা ইন্ডাস্ট্রি তো শুধুমাত্র একজন নির্ভরযোগ্য নায়ক দিয়ে টিকে থাকতে পারে না। পাশাপাশি আরও কয়েকজন সম্ভাবনাময় আর নির্ভরযোগ্য তারকার দরকার। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমা দেখে মনে হয়েছে, আরিফিন শুভ ঠিকভাবে নিজেকে পরিচালিত করতে পারলে খুব ভালো অবস্থানে যেতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। ভাগ্য সহায় হলে পর্দায় শাকিবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন। তবে এই মুহুর্তে শাকিবের পর নির্ভরযোগ্য শুভকে বলা যেতে পারে।

অভিনয় জীবন শুরুর আগে আরিফিন শুভ র‍্যাম্প মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি রেডিওতে কথাবন্ধুর কাজও করেছেন। এরপর তিনি টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। চার বছর আগে সবকিছুকে বিদায় দিয়ে ধ্যানজ্ঞান হিসেবে সিনেমাকে বেছে নেন শুভ। অনেক অনিশ্চয়তা জেনেও সিনেমা ছেড়ে যাননি তিনি। নিজেকে প্রতিনিয়ত তৈরি করেছেন। নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়ামাগারে সময় দিয়েছেন। নাচ শেখার জন্য অনেকটা সময় ছিলেন ভারতে। নানা জনের সমালোচনা শোনার পর ভালোবেসে সিনেমাকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন শুভ। যার ছবি চলে না বলে যারা এক সময় বিদ্রূপ করতেন, তারাই বলছেন আরিফিন শুভর ওপর ভরসা করার সময় এসেছে।

প্রযোজকদের নেতা নাসির উদ্দিন দিলু বলেন, ‘নায়ক হিসেবে শুভ নিঃসন্দেহে সম্ভাবনাময়। তাঁর দরকার ছিল ব্যবসায়িকভাবে হিট হওয়া একটা সিনেমা। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার কারণে শুভর প্রতি এখন প্রযোজকদের একটা নির্ভরতাও তৈরি হবে।’

বলাকা প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ঢাকা অ্যাটাক সিনেমার গল্প, নির্মাণ সবই ভালো হয়েছে। নায়ক হিসেবে এই সিনেমা শুভর জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। মনে হচ্ছে, তাঁরও আলাদা একটা দর্শক তৈরি হয়েছে, যাঁরা প্রেক্ষাগৃহে আসছেন শুধু তাঁর সিনেমা দেখার জন্য। একজন নায়কের জন্য তা খুবই ইতিবাচক।’

আরিফিন শুভ অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘জাগো’। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার পরিচালক ছিলেন খিজির হায়াত খান। এর ঠিক তিন বছর পর সাফি উদ্দিন সাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি’ ও দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ দিয়ে শুভ আলোচনায় আসেন। আর তখন থেকে সিনেমা ছাড়া অন্য কোনো কিছু ভাবতেন না এই নায়ক। সিনেমাকে শুভ পুরোপুরি পেশা হিসেবে নেন। এ ছাড়া মোস্তফা কামাল রাজের ‘তারকাঁটা’ চলচ্চিত্রে শুভর অভিনয় প্রশংসিত হয়।

যাঁকে নিয়ে সবাই এত কিছু ভাবছেন, সেই শুভ এখন কী ভাবছেন? শুভ বলেন, ‘শাকিব খান আমাদের বড় ভাই। তিনি দেশের সিনেমায় বড় একটা আসনে আছেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি একাই দেশের সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন দেশের বাইরেও তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কিছু নাই। আমরা সবাই মিলে ভালো আর ব্যবসায়িকভাবে সফল সিনেমায় কাজ করতে চাই। দেশের সিনেমার দর্শকেরা ‘ঢাকা অ্যাটাক দেখছেন, প্রশংসা করছেন একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে অনেক আনন্দের। সবাই আমাদের সিনেমা দেখুন, উৎসাহ দিন।’

সোনালীনিউজ/বিএইচ