জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ 

বর্ণিল মঞ্চ, জমকালো আয়োজন

  • বাবুল হৃদয় | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০১৮, ১২:৩৮ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সম্মাননা নিচ্ছেন নায়ক ফারুক

ঢাকা:  বর্ণিল মঞ্চ, জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ৪১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬ প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মনোনীতদের হাতে পুরস্কারের ট্রফি তুলেদেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় অনুষ্ঠানে নতুন-পুরনো শিল্পী ও কলাকুশলীদের মিলনমেলায় পরিনত হয়।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে উন্নত কাজের ধারা অব্যাহত রাখারও প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। স্বাগত ভাষণ দেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক।

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ আজীবন সম্মাননা পান আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা ও নায়ক ফারুক।

সম্মাননা পেয়ে ববিতা চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নিরলস কাজ করা ও তাকে এই সম্মাননা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।ববিতা বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের নামে একটি সরকারি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের নামকরণের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের ইনস্টিটিউট-খ্যাত এই ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চির অমর করে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান ববিতা।

সম্মানিত করায় অভিনেতা ফারুক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নানা উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্প যেসব প্রতিবন্ধকতার আবর্তে জর্জরিত তা থেকে রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া তাঁর এই স্বপ্নের চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষা করার দায়িত্ব চলচ্চিত্রকারদের। এই দায়িত্ব পালনে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সম্মাননা প্রদান শেষে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও নায়িকা পূর্ণিমার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী অনুপমা মুক্তি ও প্রতীক হাসান কোনাল, বেলাল খান ও রাজীব। 

অনুষ্ঠানে দুটি পারফরম্যান্স নিয়ে হাজির হন সাদিয়া ইসলাম মৌ, আবদুর রশিদ স্বপন, সোহেল রহমান, ফারহানা চৌধুরী বেবী, ফারহানা খান তান্না, চাঁদনী, হেনা এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টসের শিক্ষার্থীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই মৌ ও তার দল দেশীয় চলচ্চিত্রের ষাটের দশক থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। মৌয়ের বাবা সাইফুল ইসলামের গাওয়া চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ওরা ১১ জন’ ছবির ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটি দিয়ে শুরু হয় তাদের প্রথম পরিবেশনা। 

এরপর একে একে ‘দুশমন’ সিনেমার মন তো ছোঁয়া যাবে না, ‘বাদশা’র ও প্রাণের রাজা, ‘দীপ নেভে নাই’র ঐ দূর দূর দূরান্তে, ‘মান অভিমান’র আমি জ্যোতিষীর কাছে যাব, ‘সারেং বউ’র হীরামতি হীরামতি, ‘দম মারো দম’র পাহাড়ি ফুল আমি, ‘অন্তরে অন্তরে’র এখানে দুজনে, ‘রানী কুঠির বাকি ইতিহাস’র আমার মাঝে নেই এখন আমি, ‘আম্মাজান’র আম্মাজান এবং ‘নিয়তি’র ঢাকাই শাড়ি পরে গানে তারা নৃত্য পরিবেশন করেন। 

দ্বিতীয় পরিবেশনায় প্রধানমন্ত্রীর ধারাবাহিক সাফল্যকে নিয়ে বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-উর রশীদের লেখা ‘তোমার জন্য স্বপ্নপূরণ’ গানে পারফরম্যান্স করেন মৌ ও তার দল। গানটির সুর সংগীত করেছেন শওকত আলী ইমন। ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’র লাবণী, শোভিকা, প্রভা, পুষ্পিতা, অনন্যা, নিশাত, তুলি, লিসা, মালিহা, শম্পা, রাইসা, শেহরিন, লিপি, কুইন, রেয়া, রানা, সুমন, বাদশাহ, সজল শোভন, পারভেজ, ইমরান ও রবিন দুটি পারফরম্যান্সে অংশগ্রহণ করেছেন।

একই সঙ্গে চলচ্চিত্র তারকারা আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত দুই শিল্পী ববিতা ও ফারুকের কয়েকটি ছবির গানের সঙ্গে প্রাণবন্ত নৃত্য পরিবেশন করেন-আমিন খান-পপি, অপু বিশ্বাস, জায়েদ খান-সাহারা, ইমন-তমা মির্জা ও সায়মন-শিমলা। 

নৃত্য পরিচালনা করেন মাসুম বাবুল ও ইভান শাহরিয়ার সোহাগ। তাদের পারফর্ম করা গানগুলো হচ্ছে- ‘আনারকলি’ ছবির আমার মন বলে তুমি আসবে, ‘সারেং বৌ’র ওরে নীল দরিয়া, ‘নয়ন মণির’ চুল ধইরোনা খোঁপা খুলে যাবে যে নাগর, ‘সুজন সখী’র সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা, ‘নিশান’র চুপি চুপি বল কেউ জেনে যাবে, ‘ঝিনুক মালা’র তুমি ডুব দিও না জলে কন্যা প্রভৃতি। তথ্য মন্ত্রণালয় ও এফডিসির সার্বিক তত্ত্বাবধানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।

 জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬ শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 ‘জাতীয় পুরস্কার-২০১৬’ যারা পুরস্কার পেলেন

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬-তে সর্বোচ্চ ৭টি পুরস্কার লাভ করে ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি। ২৪ ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় ২৮টি পুরস্কার। এতে  আজীবন সম্মাননা পান ববিতা ও ফারুক। অন্য পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন— শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অজ্ঞাতনামা, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ঘ্রাণ, পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী [আয়নাবাজি], অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী [আয়নাবাজি], অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা [অস্তিত্ব], কুসুম শিকদার [শঙ্খচিল], পার্শ্বচরিত্রে আলীরাজ [পুড়ে যায় মন], ফজলুর রহমান বাবু [মেয়েটি এখন কোথায় যাবে], পার্শ্বঅভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ [কৃষ্ণপক্ষ], খল অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম [অজ্ঞাতনামা], প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর, শিশু শিল্পী আনুম রহমান খান (সাঁজবাতি),

সংগীত পরিচালক ইমন সাহা [মেয়েটি এখন কোথায় যাবে], সুরকার ইমন সাহা [মেয়েটি এখন কোথায় যাবে (গান : বিধিরে ও বিধি বিধি), গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার [মেয়েটি এখন কোথায় যাবে (গান : বিধিরে ও বিধি বিধি), পুরুষ কণ্ঠশিল্পী ওয়াকিল আহাদ [দর্পণ বিসর্জন] (গান : অমৃত মেঘের বারি), নারী কণ্ঠশিল্পী  মেহের আফরোজ শাওন, কৃষ্ণপক্ষ (গান : যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো), কাহিনীকার তৌকীর আহমেদ [অজ্ঞাতনামা], চিত্রনাট্যকার অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম শাওন [আয়নাবাজি], সংলাপ রচয়িতা সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন, [আন্ডার কনস্ট্রাকশন], চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান [আয়নাবাজি], চিত্রসম্পাদক ইকবাল আহসানুল কবির [আয়নাবাজি], শিল্পনির্দেশক উত্তম গুহ [শঙ্খচিল], শব্দগ্রাহক রিপন নাথ [আয়নাবাজি], পোশাক ও সাজসজ্জা সাত্তার ও ফারজানা সান [নিয়তি, আয়নাবাজি], শ্রেষ্ঠ রূপসজ্জা [আন্ডার কনস্ট্রাকশন]।


সোনালীনিউজ/বিএইচ