৭ বছর গৃহবন্দি, এবার বের হলেন তবে...

  • বিনোদন প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০১৯, ১২:৩০ পিএম
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

ঢাকা: রাজধানীর আফতাব নগরের বাসায় একমাত্র পুত্র সামির আহমেদকে নিয়েই তিনি রাতদিন বন্দি জীবন-যাপন করেছেন। শুধু অসুস্থতা ছাড়া তিনি বাইরে যাননি। ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টানা ৭ বছর গৃহবন্দি ছিলেন বরেণ্য গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এবার বের হলেন তবে একেবারেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর কখনোই ঘরে ফিরবেন না। তিনি বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন চিরদিনের জন্য। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। নিরাপত্তাজনিত কারণেই তাকে গত ৭ বছর গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে বলে তিনি গত বছর তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন। দীর্ঘ ৬ বছর গৃহবন্দি থাকার পর গত বছর হঠাৎ তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমার হার্টে ৮টি ব্লক ধরা পড়েছে। বাইপাস সার্জারি ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়। কাউকে না জানিয়েই আমি ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের সিসিইউতে চার দিন ভর্তি ছিলাম। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমি আমার হার্টের বাইপাস সার্জারির জন্য প্রস্তুত আছি।’

তার এই স্ট্যাটাসে অবাক হন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ভক্ত-শ্রোতা, সহকর্মি, শুভানুধ্যায়িসহ নিকটজনেরা। সবাই তার খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করেও তাকে কেউ পাননি। কারণ তখনও তিনি গৃহবন্দি। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার কারো কোনো সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। আমি আমার জন্য একাই যথেষ্ট। শুধু সার্জারি শুরুর আগে দশ মিনিট আমার বুকে লাল-সবুজের পতাকা ও পবিত্র কোরআন শরীফখানা রাখতে চাই। আর সবাই শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন। আমাকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই’।

গৃহবন্দি থাকার বিষয়ে তিনি তার স্ট্যাটাসে লেখেন, সরকারের নির্দেশেই আমি গত ৬ বছর যাবত গৃহবন্দি আছি। কারণ, ২০১২ সালে আমাকে যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। সাহসিকতার সাথে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল একাত্তরে ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলখানায় গণহত্যার ইতিহাস নিয়ে। ওই গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে আমিও একজন। সেখানে একসঙ্গে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল। এই সাক্ষী দেয়াকে কেন্দ্র করে আমার নিরপরাধ ছোটভাই মিরাজ আহমেদ যে হত্যা হয়ে যাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। সরকারের কাছে বিচার চেয়েও পাইনি। তাই আমি এখন ২৪ ঘন্টা পুলিশি পাহারায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে গৃহবন্দি আছি’।

অত্যন্ত আক্ষেপ করে বুলবুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমার জীবনে এ এক অভূতপূর্ব করুণ অধ্যায়। একটি ঘরে টানা ৬ বছর বন্দি থাকার পর আজ আমি উল্লেখযোগ্যভাবে অসুস্থ’। তার এমন স্ট্যাটাস পড়ে অনেকেই তাকে সান্তনা দিয়ে, দোয়া দিয়ে এবং মঙ্গল কামনা করে মন্তব্য করেছেন। আজ তিনি সবার সেই সান্তনা ও দোয়া নিয়েই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার মতো করে আর কেউ কোনো দিন লিখবে না, তার সুর কণ্ঠে তুলে গাইবে না কোনো শিল্পী- আমার বুকের মধ্যেখানে/ মন যেখানে হৃদয় যেখানে/ সেইখানে তোমায় আমি/ রেখেছি কতো না যতনে…।

সোনালীনিউজ/বিএইচ