বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বিশ্ব তাপমাত্রা

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮, ০৮:০৫ পিএম

ঢাকা: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার শিগগিরই বিপদসীমা অতিক্রম করতে চলেছে। ২০৪০ সালের মধ্যে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে তাপমাত্রা। এমনই আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির অর্থ হিমবাহ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, যা মহা প্লাবন ডেকে আনতে পারে। ফাঁস হওয়া এই তথ্য প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যপূরণ নিয়েও সংশয় তৈরি করেছে।

শিল্পায়নের আগের পর্যায়ে পৃথিবীর যে গড় তাপমাত্রা ছিল, তার বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। এ জন্য উদ্যোগী হবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলি। প্যারিস চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য ছিল এটি। কিন্তু, সেই লক্ষ্যপূরণ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে জাতিসংঘের এই রিপোর্ট। ফাঁস হওয়া খসড়া নথিতে দেখা যাচ্ছে, দুই দশকের কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই এই তাপমাত্রা বাড়তে পারে। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমানো গেলে, এই শতকের দ্বিতীয়ার্ধে তাপমাত্রা কমানো যেতে পারে।

৩১ পাতার খসড়া নথি চূড়ান্ত হবে আগামী অক্টোবরে। এই নথির বিভিন্ন অংশ প্রকাশিত হয়েছে একাধিক সংবাদপত্রে। যদিও পুরো নথি প্রকাশিত হয়নি। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাবে। এই জলস্ফীতির জেরে সমুদ্রের লাগোয়া বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভেসে যেতে পারে জনপদও। তাই এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে খুব বিপজ্জনক বলে জাতিসংঘের খসড়া নথিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

এ নিয়ে ইতিমধ্যেই তুমুল আলোচনা শুরু হলেও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেলের মুখপাত্র জোনাথন লিন এ নিয়ে সাবধানী মন্তব্য করেছেন। তাঁর ভাষায়, খসড়ার ভাষ্য অনেক পরিবর্তিত হবে। চূড়ান্ত নথির সঙ্গে এর অনেকাংশেই অমিল থাকবে। এই খসড়া তৈরিতে যুক্ত ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড্রিউ শিনডেলও একই সুরে বলেন, খসড়া ও চূড়ান্ত নথির মধ্যে অনেকটাই ফারাক থাকার সম্ভাবনা।

দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা এই প্রথম সামনে এল, এমনটা নয়। গত বছর ‘জিয়োফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই আশঙ্কার কথা বলেছিল। তাতে লেখা হয়, উনিশ শতকের তুলনায় গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির বেশি বাড়তে চলেছে চলতি শতকে। ১৮৫০-১৯০০ সালে যে গড় তাপমাত্রা ছিল, তার থেকে ১.১ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা ছিল গত বছর, ২০১৭ সালে। এই বৃদ্ধিই ইঙ্গিত দিয়েছে, আগামী এক দশকে তাপমাত্রা কোথায় যেতে পারে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, একুশ শতকের প্রথম দশক থেকেই এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে তাপমাত্রার বৃদ্ধি রোখা সম্ভব হয়নি। 

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশিষ্ট আবহবিদ গ্যাবি হেগের্লের আশঙ্কা, এখনই উদ্যোগ না নিলে বড় মাপের জলবায়ু পরিবর্তন এড়ানো যাবে না।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বেঞ্জামিন হেনলি ‘কার্বন ব্রিফ’ নামে একটি ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন, সমুদ্রস্রোতের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু বদলে যেতে পারে। এক দশকের মধ্যে সেই পরিবর্তন চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তাপমাত্রা বাড়লে আন্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলতে পারে। এর ফলে বাড়বে সমুদ্রে জলের স্তর। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে মহা প্লাবনের আশঙ্কাই সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

গত বছর এ নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন এক্সেটর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিদ রিচার্ড বেটস। তিনি বলেন, এক দশক নয়, এই তাপমাত্রা পরিবর্তনের বড়সড় প্রভাব পড়তে আরো বেশি সময় লাগবে। জাতিসংঘের নথি অনুযায়ী ২০৪০ সালে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা বেটসের দাবির সঙ্গে এক।-কালেরকণ্ঠ

সোনালীনিউজ/জেএ