করোনাভাইরাস যেভাবে পরীক্ষা করা হয়

  • সোনালীনিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২০, ১০:২৪ পিএম

ঢাকা: পুরো পৃথিবী এখন করোনাভাইরাস মহামারীতে আক্রান্ত। নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন কিংবা চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় বিভিন্ন দেশে তা তীব্র আকার ধারণ করছে। তবে নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকলেও শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা রয়েছে। আজ ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ে পরীক্ষা সম্পর্কে জানবো।

করোনাভাইরাস একটি সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ এনভেলপড ভাইরাস। শরীরে প্রবেশের পর ভাইরাস তার স্পাইক প্রোটিনের সাহায্যে মানবকোষের সাথে সংযুক্ত হয়। মানবদেহে প্রবেশের ৭-১০ দিন পর ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়া শুরু হয়। এখন আমরা সরাসরি ভাইরাসের আরএনএ শনাক্ত করে শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করতে পারি কিংবা পরোক্ষভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে উৎপন্ন হওয়া এন্টিবডি নির্ণয় করেও ভাইরাসের সংক্রমণ প্রমাণ করা যায়। সব পদ্ধতিরই সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই আছে।

তবে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের দেশে প্রথম পদ্ধতিটি অবলম্বন করেই ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিটি আরআরটি-পিসিআর বা রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিয়েকশন পরীক্ষা নামে পরিচিত।

এ পদ্ধতিতে একটি বিশেষ টেস্ট কিট ব্যবহৃত হয়। টেস্ট কিট হলো কান পরিষ্কার করার কটন বাডের মতো (কিন্তু আকারে বড়) একটি জিনিস, যার নাম ‘সোয়াব স্টিক’। এই সোয়াব স্টিক রাখা থাকে লেবেল আঁটা একটি ছোট শিশির (ভায়াল) মাঝে। কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ জিনিসটি একটি জিপলক ব্যাগে রাখা থাকে।

যার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে হবে, প্রথমে সোয়াব স্টিকটা তার নাকের ভেতর দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে সেখান থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। গলার এই অংশটার নাম ন্যাসোফ্যারিংক্স, সে জন্য সোয়াবটিকে বলা হয় ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব।

সোয়াব স্টিকটি ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ন্যাসোফ্যারিংক্সের নমুনা সংগ্রহ হয়ে গেলে সোয়াবটি নরমাল স্যালাইনযুক্ত ভায়ালে প্রবেশ করিয়ে রোগীর শনাক্তকরণ আইডি লেবেলে লিখে ব্যাগে ভরে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয়।

একইরকমভাবে গলার পেছনের দিক থেকে আরও একটি স্যাম্পল নেওয়া হয়, যার নাম থ্রোট সোয়াব। আগের মতো এই স্যাম্পলটিও যথাযথভাবে লেবেলিং করে যথাযথ তাপমাত্রা বজায় রেখে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

অর্থাৎ একজন ব্যক্তি থেকে দুইটি করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই নমুনা কোনো একটি ল্যাবে পরীক্ষা শেষ করতে হবে।

কিন্তু যদি ৭২ ঘণ্টায় নমুনা ল্যাবে পৌঁছানো সম্ভব না হয় বা ল্যাবে পৌঁছার পরও দীর্ঘ জটের কারণে পরীক্ষায় দেরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে স্যাম্পলটি শুরুতেই মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু নাক থেকে এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সর্দি বা মিউকাস থেকে নমুনা সংগ্রহ করলেও কাজ হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।

এর পরের কাজটিই হলো আসলে করোনাভাইরাসের টেস্টিং। এটি করার জন্য ল্যাবরেটরিতে একটি পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন) যন্ত্র প্রয়োজন। প্রথমে সোয়াবটির স্যাম্পল থেকে একটি জলীয় দ্রবণ বানানো হয়। এই স্যাম্পলে যদি ভাইরাস থাকে তা জলীয় দ্রবণেও আসবে।

বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে পিসিআর যন্ত্রে একটি ভাইরাসের আরএনএ থেকে অসংখ্য আরএনএ কপি তৈরি করা হয়, প্রক্রিয়াটির নাম অ্যাম্পলিফিকেশন–অনেকটা ফটোকপি করার মতো ব্যাপার।

অসংখ্য কপি তৈরি হওয়ার ফলে আরএনএ-টিকে পরীক্ষা করা সহজ হয়। আরএনএ’র বৈশিষ্ট্য থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায় এটি করোনাভাইরাসের আরএনএ, না-কি অন্য কোনো জীবাণুর নিউক্লিক এসিড।

আর এ টেস্টটি সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ এবং দক্ষ মাইক্রোবায়োলজিস্ট বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিকেল ব্যক্তি। সবকিছু ঠিক থাকলেও ল্যাবে টেস্টের কোনো জট না থাকলে সকালে স্যাম্পল ল্যাবে পৌঁছলে বিকেলের মধ্যেই জানা যেতে পারে পরীক্ষার ফলাফল।

সোনালীনিউজ/এইচএন