চাটমোহরে পাখা পল্লীতে ব্যস্ততা নেই কারিগরদের

  • চাটমোহর (পাবনা)  প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২১, ০৭:১০ পিএম

পাবনা : জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই গরমে কদর বেড়েছে তালা পাখার। কিন্তু পাবনার চাটমোহর উপজেলার পাখা গ্রাম বলে খ্যাত মূলগ্রাম ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামে এখন পাখা কারিগরদের ব্যস্ততা নেই। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের মহেষপুর গ্রামে আগে ৫০টির অধিক পরিবার তালপাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের থাবায় সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।

সারাদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটার কারণে তৈরি পাখা বাজারজাত করা দুরহ হয়ে পড়েছে। তাই গ্রামের পাখা তৈরির সাথে জড়িতরা পেশা বদল করেছে। করোনাকালীন সময়ে তারা দিনমজুরী করে দিনাতিপাত করছে।

মহেষপুর গ্রামে গিয়ে পাখা তৈরির কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুরপাল্লার বাস ও ট্রেন বন্ধ থাকায় তারা পাখা তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তাদের তৈরি করা পাখা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বেপারীরাও আসছেন না। কয়েকটি পরিবার এখনো স্বল্প পরিসরে পাখা তৈরি করে আশপাশের এলাকায় বিক্রি করছে।

এদের মধ্যে একজন আঃ কাদের। আঃ কাদেরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল আঃ কাদের ও তার স্ত্রী বেদেনা খাতুন কুঁড়ে ঘরের সামনে বসে তৈরি করা পাখায় রঙের আঁচড় দিচ্ছেন। এই দম্পতি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। বললেন, “অনেক বার সাংবাদিকরা আইচে, ছবি তুলিছে, পেপারে দিছে, নেটে দিচে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।” করোনার এই সময়ে এই বৃদ্ধ দম্পতি সরকারি কোন অনুদানই পায়নি। ঈদের সময় সাড়ে ৪ শত করে টাকা অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তি পেলেও সে টাকা পায়নি আঃ কাদের। গ্রামের অনেকে গরীব মানুষই পায়নি এই অর্থ। আঃ কাদের জানালেন, একেকটি পাখা তৈরি করতে ৫ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ৭/৮ টাকায়। বেপারীরা আরো বেশী দামে বেচে।

মহেষপুর গ্রামের পাখা তৈরির মূল কারিগর মেয়েরাই। পুরুষরা তালপাতা সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করেন। মেয়েরা ঘরে বসে পাখা তৈরি ও রঙের কাজ করেন। এখন গ্রামে পাখা কারিগরদের ব্যস্ততা নেই। গ্রামের আয়ুব আলী, ইব্রাহীম হোসেন, তইজ উদ্দিন, আঃ মালেক, রফিক উদ্দিনসহ অনেকেই পাখা তৈরির কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। করোনার সময় পাখা বিক্রি করতে না পারায় তা পেশা বদলেছে। ব্যাপারী আর পাখা নিতে আসেন না। ফলে পাখা তৈরি করে তা ফেলে রাখতে হয়।

তাছাড়া এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পাখা তৈরির উপকরণ কিনে পাখা তৈরি করে বিক্রি করতো এসকল পরিবার। পাখা বিক্রি না হওয়ায় এনজিও’র কিন্তি দিতে পারছিলনা তারা। ফলে দিনমজুরী করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। পাখা তৈরির কারিগরদের দাবি সরকার যদি তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতো, কাহলে হয়তো পরিবারগুলো ভালভাবে বাঁচতে পারতো। করোনাকালীর এই সময়েই তারা পায়নি কোন সরকারি অনুদান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই