লিচুর মুকুলে সেজেছে প্রকৃতি

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২২, ০৪:২৪ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। লিচুর মুকুলে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এর সুগন্ধও। মুকুলের সুমিষ্টি সুবাস আন্দোলিত করে তুলেছে মানুষের মনও।

সেই সাথে লিচু মুকুলে যেন প্রকৃতিকে সাজিয়েছে যেন এক অপরুপে। হলুদ আর সবুজে যেন এক মহামিলনে পরিণত হয়ে আছে। মৌমাছির দল গুন গুন শব্দে মনের আনন্দে ভিড়তে শুরু করেছে লিচু বাগানে।

এ দুই উপজেলায় পাটনাই , বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদেনা, চায়না থ্রিসহ নানা জাতের লিচু চাষ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এখন প্রতিটি লিচু গাছ মুকুলে ভরপুর হয়ে উঠেছে । বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে ভালো ফলনের আশা করছেন স্থানীয় লিচু চাষিরা । ইতিমধ্যে চাষিরা লিচু গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন এ বছর মাঘ মাসের শেষদিকে বৃষ্টি হওয়ায় এ উপজেলায় লিচুর গাছগুলোতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে লিচু বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলছে আমের স্বর্ণালী মুকুলের । এদিকে উপজেলার আজমপুর, রামধননগর, চানপুর, দুর্গাপুর, খারকোট, মিনারকোট, নিলাখাত, বিজয়নগরের পাহাড়পুর, সেজামুড়া, কামালমুড়া, গিলামুড়া, জলিলপুর, মুকুন্দপুর,চানপুর,ভিটিদাউদপুর,খাটিংগা, বিষ্ণুপুর, ছতুরপুর, কালাছড়া, বক্তারমুড়া, শ্রীপুর, নোয়াগাও, পত্তন, আদমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে লিচু চাষ হচ্ছে। ওইসব এলাকায় বাগানে দেশী লিচু, এলাচি , চায়না , পাটনাই ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়। তবে ওইসব এলাকার মাটি লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় তারা লিচু চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ জেলার মানুষের কাছে দিনদিন সমাদৃত হচ্ছে লিচুর বাগান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগর উপজেলায় ৩৭৫ হেক্টর, আখাউড়ায় ৯০ হেক্টর রয়েছে।

পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে লিচুর সোনালী মুকুল। বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল থেকে কুঁড়ি আসা শুরু হবে। শিগগিরই কুঁড়ি থেকে ফুটবে গুঁটি লিচু। সবুজ গুঁটি থেকে থোকা থোকা শোভা পাবে লাল টকটকে লিচু। বর্তমানে লিচুর মুকুলে এখন মৌমাছির গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মুকুলের মিষ্টিঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমরের সুর গুঞ্জন। লিচু বাগানের মালিকরা জানান গাছে মুকুল দেখার পর থেকে তাদের মনটা বেশ ভালো লাগছে। তারা লিচুর মুকুল ধরে রাখতে নানা প্রকার প্ররিচর্যায় এক ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এই দুই উপজেলায় দেশী,এলাচি , চায়না , পাটনাই ও বোম্বাই লিচুর খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এ লিচুর খোসা পাতলা, শাশ পুরো রসালো ও বিচি ছোট হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছে।

চানপুর এলাকার লিচু বাগানের মালিক মো: গিয়াস উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তিনি দীর্ঘ বছর ধরে বোম্বাই ও পাটনাই জাতের লিচুর চাষ করছেন। তবে এখানকার লিচুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর খ্যাতি রয়েছে। লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন। তবে করোনার কারণে গত ২বছর ব্যাপারীরা কম এলেও এ বছর বেচাকেনা ভালো হওয়ার আশা করছেন বলে জানায়। গাছে যে ভাবে লিচুর মুকুল এসেছে তিনি আশা করছেন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

বিষ্ণুপুর গ্রামের লিচু চাষি মো: সুহাগ মিয়া বলেন তার ৪টি বাগানে চায়না , পাটনাই ও বোম্বাই ১২০টি লিচু গাছ রয়েছে। ইতিমধ্যে সবকয়টি লিচু গাছে মুকুল এসেছে। এখন তিনি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানায়। যে ভাবে গাছের মধ্যে মুকুল এসেছে তিনি আশা করছেন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হবে।

লিচু চাষি মো: আকরাম হোসেন বলেন, তার ৩টি বাগানে দেশী,বোম্বাই ও পাটনাই জাতের ১৫০টি লিচু গাছ রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি গাছে অন্য কয়েক বছরের তুলনায় লিচুর মুকুল বেশী এসেছে। ফলন ভালো রাখতে নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বাংলাদেশের খবরকে বলেন এখানকার মাটি লিচু চাষের জন্য খুবই উপকারি। লিচু ফলন বৃদ্ধিতে চাষিদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আখাউড়া ও বিজয়নগরের লিচুর খ্যাতি রয়েছে জেলাসহ দেশজুড়ে। তিনি আরও বলেন বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে। যা লিচুর বাম্পার ফলনের জন্য উপযোগী। এ অবস্থায় থাকলে এবার লিচুর বাম্পর ফলনের আশা প্রকাশ করছেন। তবে সবকিছুই প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই