আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

  • সনতচক্রবর্ত্তী, ফরিদপুর | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০২:৫১ পিএম

ফরিদপুর: কালের বিবর্তন আর আধুনিক প্রযুক্তির ফলে ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি শিল্প। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া এখন দেশের প্রতিটা অঞ্চলে। বদলে যেতে বসেছে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান। মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে তৈরি করা হয়েছে নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি, ব্যবহার হচ্ছে নানা রকম প্রযুক্তি।

ঢেঁকিই ছিল এক সময়ের গ্রামীণ জনপদে চাল, চালের গুঁড়া ও আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে ঢেঁকি এখন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে। দিন দিন ঢেঁকি শিল্প বিলুপ্ত হলেও একে সংরক্ষণের আর কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এখন ঢেঁকির আর দেখাই মেলে না।

অনেক  সময়ে কবি-সাহিত্যিকগণ ঢেঁকি কে নিয়ে অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন।
“ও বউ ধান ভানে রে/ঢেঁকিতে পাড় দিয়া/ঢেঁকি নাচে বউ নাচে/হেলিয়া দুলিয়া/ও বউ ধান ভানে রে…।”

গ্রামবাংলার নববধূ, তরুণী ও কৃষাণীর কণ্ঠে এ রকম গান এখন আর শোনা যায় না। গানটি একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। অনেকের কাছে এখনও প্রিয়। প্রচলিত প্রবাদ আছে- ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।’ ঢেঁকিকে নিয়ে অনেক গান ও প্রবাদ যেমন প্রচলিত আছে, আবার তেমনি তৎকালীন কবি-সাহিত্যিকেরাও তাদের লেখনীতে তুলে ধরেছেন প্রাচীন ঐতিহ্যের বহু কথা।
 অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ঘরে আসে নতুন ধান। শুরু হয় তখন নতুন চাল ও চালের গুঁড়া তৈরির কাজ। সেই চালের গুঁড়া থেকে পিঠা-পুলি, ফিরনি-পায়েস তৈরি করা হতো। চালের রুটি-মাংসের ঝোল এই সময়টাতে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করত। আর এসবের আয়োজন হতো ঢেঁকিতে।

এ ছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভেনে আটা তৈরি করা হতো। ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দে মুখরিত ছিল বাংলার জনপদ। কিন্তু এখন ঢেঁকির সেই শব্দ শোনা যায় না। শহরে তো বটেই, আজকাল অনেক গ্রামের ছেলেমেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটি শুনেছে, কিন্তু ঢেঁকি দেখেনি। কান চেনে না ঢেঁকির শব্দ। কাকডাকা ভোরে ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে ঘুম ভাঙত বাড়ির মানুষের। আজ সেই ছন্দময় জীবন নেই গ্রামের।

হাজার বছরের ঐতিহ্য ছিল ঢেঁকি। গ্রামাঞ্চলে প্রায় বাড়িতেই একটি করে ঢেঁকিঘর ছিল। গৃহস্থবাড়ির নারীরা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তখন কদরও ছিল এর। গরিব নারীরা ঢেঁকিতে শ্রম দিয়ে আয়রোজগারের পথ বেছে নিতেন। ঢেঁকিতে কাজ করাই ছিল দরিদ্র নারীদের আয়ের প্রধান উৎস। ধানকলের ব্যাপকতায় এই ঢেঁকি বিলুপ্ত হওয়ায় পথে। গ্রামের বাড়িগুলোতে এখন ঢেঁকি কালেভাদ্রে চোখে পড়ে।

জেলার গ্রামগুলোতে ঘুরেও এখন ঢেঁকির দেখা মেলে না। ঢেঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই জানান, আগে প্রায় সবার বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। সেই ঢেঁকিছাঁটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ এখন আর নেই। পিঠার স্বাদ ও গন্ধ এখনো মনে পড়ে। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে গ্রামবাংলায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে।

ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (অবসরপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্ত্তী
ঢেঁকি সম্পর্কে জানান, আগে প্রায় সবার বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। সেই ঢেঁকিছাঁটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ এখন আর নেই। আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎচালিত মেশিন। আর ভবিষ্যতে প্রাচীন এই যন্ত্রগুলোর দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে।

সোনালীনিউজ/এম