ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ইতিহাস

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০১৬, ০৭:১৬ পিএম

সোনালীনিউজ ডেস্ক
মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল মন্ত্রই হলো প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে মুনাফা অর্জন করে নেয়া। বিংশ শতাব্দীতে মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি পরিচিত হলেও, ব্যবসায়িক প্রতিদন্দ্বিতার মধ্যে টিকে থাকার জন্য ব্যবসায়িরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতো। সেই কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ধারণা। ১৭৯৬ সালের দিকে লন্ডনের সেন্ট জেমস স্ট্রিটের ৮৯ পলমল ভবনে হার্ডিং, হাওয়েল অ্যান্ড কোং নামে প্রথম ডিপার্টমেন্ট স্টোল খোলা হয়। শুরুর দিকে ওই ডিপার্টমেন্টে স্টোরে মোট চারটি বিভাগ খোলা হয়েছিল, যেখানে যথাক্রমে বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার উপাদান পাওয়া যেতো। কিন্তু সেই আমলের চারটি বিভাগ আজ শত বিভাগে বিকশিত হয়েছে।

হার্ডিং, হাওয়েল অ্যান্ড কোং মূলত তৎকালীন সমাজের নারীদের সাজসজ্জার কথা মাথায় রেখেই খোলা হয়েছিল। গোটা লন্ডনে তখন একমাত্র এই স্টোরেই নারীরা তাদের পছন্দের দ্রব্যাদি নিজেদের পছন্দ মাফিক অনেকটা সময় নিয়ে কিনতে পারতো বলে নারী মহলে এই স্টোরের বিপুল চাহিদা ছিল। বিশেষ করে সমাজের মধ্যবিত্ত নারীদের কাছে, যারা একটু একটু করে জমানো টাকা দিয়ে নিজেদের ফ্যাশন সচেতনতার প্রয়োজন মেটাতো। এখানে বলা ভালো, তৎকালীন লন্ডনে তখনও ফ্রি ট্রেড শুরু হয়নি, অর্থাৎ কেউ যদি কোনো পণ্যের দাম করতো তাহলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে সেই পণ্য কিনতে হতো। কিন্তু হার্ডিং, হাওয়েল স্টোর আসার পর নারীরা নিজেদের পছন্দের পোশাক পরিধান করে সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা পায়।

কিন্তু প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের প্রায় দেড়শ বছর পর এর প্রসার ঘটে। বিশেষ করে রানী ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স অ্যালবার্টের কল্যাণে এর প্রসার বাড়ে। কারণ ১৮৫১ সালে ক্রিস্টাল প্যালেসে রাজপরিবারের তত্ত্বাবধানে এক বিশাল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। ওই ক্রিস্টাল প্যালেসের নকশা করেছিলেন বিখ্যাত নকশাবিদ জোসেফ প্যাক্সটন। ১৯০৫ সালেই এই প্যালেসটি হলো ইউরোপের সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রদর্শনীটি ক্রিস্টাল প্যালেসে করার কারণ ছিল এর বহুমুখী নকশা। তিন লক্ষাধিক কাচবিশিষ্ট আসবাব এবং হরেক রকমের আসবাব যেখানে নানান রকমের পণ্য রাখা যেতো।

আজ অবধি বিশ্বে যতগুলো বৃহত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর তৈরি করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই নকশাবিদ প্যাক্সটনের নকশার অনুকরণে। বিশেষ করে পোশাক ব্যবসায়িদের মাঝে এই নকশা বিপুল সাড়া ফেলে, কারণ অল্প স্থানে অনেক বেশি সংখ্যক উপাদান রাখা যায় এবং তা দেখতেও সুন্দর লাগে। লন্ডনের মধ্যবিত্তদের হাত ধরেই মূলত পরবর্তীতে পুরো ইউরোপ এবং আমেরিকায় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছড়িয়ে যায়।

১৮৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে তৈরি হয় তৎকালীন সময়কার সর্বাধিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। হ্যারি গর্ডন শেলফ্রিজ এবং মার্শাল ফিল্ড নামের দুই ব্যক্তি শুরু করেছিলেন ওই স্টোরটি। শেলফ্রিজের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘খদ্দেররা সর্বদাই সঠিক’। আর শেলফ্রিজের এই নীতি রাতারাতি শিকাগোতে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটিকে জনপ্রিয় করে তোলে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দিবসগুলোতে আজকে আমরা ইউরোপে পণ্য বিক্রির যে ধুম দেখতে পাই, এই পরিকল্পনার পেছনেও আছেন এই দুই ব্যক্তি। কিন্তু ১৯০৬ সালের দিকে এই দুই ব্যক্তির অংশীদারিত্ব টুটে গেলে লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটে নতুন আরেকটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলে বসেন হ্যারি গর্ডন। আর সেই স্টোরের নকশা করেছিলেন দানিয়েল বুরহ্যাম।

মজার বিষয় হলো দানিয়েল শুধু হ্যারির নকশাবিদই ছিলেন না, তিনি মার্শাল ফিল্ডেরও নকশাবিদ ছিলেন। এবং ১৮৯৩ সালে শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ারের নকশাও ছিল তার করা। এরপর ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শনী নকশার কাজও ছিল তারই করা। কিন্তু আজ যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আমরা দেখছি সেই পথে আসতে তখনও অনেকটা দেরি। প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা দিয়ে ঋদ্ধ করেছেন একটি বৃহত পরিকল্পনাকে। ১৯০৯ সালে শেলফ্রিজ তার খদ্দেরদের জন্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট, ছাদে বাগান, পড়ালেখার জায়গা এবং বিদেশি খদ্দেরদের জন্য আলাদা বিভাগ খোলেন। শুধু তাই নয়, খদ্দেরদের মধ্যে যারা একটু সৌখিন তাদের জন্য বিভিন্ন চিত্রকর্ম বিক্রির জন্যও একটি স্থান রাখা হয়েছিল শেলফ্রিজের স্টোরে।

শেলফ্রিজের আমলের পর বর্তমান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের চলছে আধুনিক সময়। আরও নিত্য নতুন সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো এখন প্রায় সব স্থানেই ছড়িয়ে গেছে। খদ্দেরদের সবটুকু সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্য এবং নিয়মের মধ্যে খদ্দেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য স্টোর মালিকরা নিত্য নতুন পরিকল্পনা বের করছে। আগে যেখানে একটি পরিকল্পনা থেকে অপর একটি পরিকল্পনার বাস্তবতায় হতে দশ থেকে বিশ বছর সময় লাগতো, বর্তমানে তা সকাল আর বিকেলের ব্যাপার মাত্র। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক স্টোর মালিককেই তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ব্যবসায়ে টিকে থাকতে হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন