কঙ্গোর সোনার খনি

  • ফিচার ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭, ০২:০৪ পিএম

ঢাকা: ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, সংক্ষেপে ডিআরসি। আফ্রিকার দেশটির উত্তরাঞ্চলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস সোনার খনি। শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খনি থেকে সোনা আহরণ করে। বহু হাত ঘুরে, অবশেষে তা পরিণত হয় জ্বলজ্বলে সোনার বারে।

খনির অনেক গভীর থেকে নৈপুণ্যের সাথে মাটি থেকে সোনা আলাদা করেন শ্রমিকরা। খনির দলে থাকেন দুই ধরনের শ্রমিক, যারা খনন করেন, এবং যারা সোনার আকর মাটির ওপরে নিয়ে আসেন। একজন শ্রমিককে দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা খনিতে কাজ করতে হয়।

এই খনিতে এক গ্রাম সোনার জন্য ২০০ কেজি আকরিক সংগ্রহ করতে হয়। ছোট ছোট সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে খনির মধ্য দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয় শ্রমিকদের। মাটিভর্তি বস্তা আসছে, সেটি বয়ে নিয়ে যেতে হবে বাইরে। কঙ্গোতে কৃষিকাজের পর সোনার খনিই শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস।

সোনার মাটিভর্তি বস্তা বয়ে নিয়ে গেলে শ্রমিক পান ৫০০ কঙ্গোলিজ ফ্রাংক যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫ টাকার সমান। দিন শেষে কয়েকশ টাকা পান শ্রমিকরা। খনিতে সবচেয়ে কম বেতন পাওয়াদের মধ্যে আছেন এই বহনকারীরা। 

পাথর ও মাটির খাঁজে খাঁজে আটকে থাকে বিশুদ্ধ সোনা। সোনা আহরণের জন্য সেই পাথর ভেঙে টুকরো করতে হয়। এর জন্য আছে আলাদা শ্রমিক। মেশিনে নয়, প্রচণ্ড পরিশ্রমের এই পুরো কাজটাই হয় হাতে। এমন একটি প্লাস্টিকের গামলা থেকে সোনা আলাদা করতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা।

ভাঙা আকরিক পানিতে মিশিয়ে কাদা তৈরি করতে হয়। ঘনত্ব বেশি হওয়ায় শুধু সোনাই পড়ে থাকে নীচে, বাকি পানি ও মাটি চলে যায় গড়িয়ে। তারপর জমে থাকা সোনা পারদের সাহায্যে ছেঁকে তোলা হয় আরেক প্লাস্টিকের গামলায়।

খনির আশেপাশেই দোকান বসিয়ে এই অপরিশোধিত সোনা কিনে নেন কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী। ছোট ছোট খনি মালিকরা এই অপরিশোধিত সোনা বিক্রি করেন।

বড় ব্যবসায়ীরা উত্তপ্ত চুলায় অপরিশোধিত সোনা নাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে ফেলেন। উদ্দেশ্য, অপ্রয়োজনীয় জিনিস দূর করা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চেয়ে অনেক বড় পরিমাণে সোনার চালান দিয়ে থাকেন বড় ব্যবসায়ীরা। প্রতি সপ্তাহে বিক্রি হয় কয়েক কেজি সোনা। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চেয়ে লাভের হার কম হলেও মাস শেষে আয়টা হয় বেশ বড়ই।

উত্তপ্ত সোনা ঠান্ডা হওয়ার পর একটি ইলেকট্রনিক দাঁড়িপাল্লায় মাপা হয়। এই পর্যায়ে এসে সোনা অন্তত ৯২ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধিত হয়। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে তা নির্ভর করে কোন খনি থেকে আহরণ করা হয়েছে তার ওপর।

এবার ১,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সোনা গলানো হয় আরেকটি উত্তপ্ত চুলায়। পরিণত করা হয় একটি মণ্ডে। গ্রাফাইট সোনার সাথে বিক্রিয়া করে না। তাই গ্রাফাইটের তৈরি একটি ছাঁচে ঢালা হয় তরল সোনা। কয়েক কেজি সোনা গলাতে লাগে মাত্র ২০ মিনিট।

এতো উত্তপ্ত সোনা পুরোপুরি ঠান্ডা হতে সময় লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতো অপেক্ষার ধৈর্য আছে কার! এজন্য মোটামুটি ঠান্ডা হলেই ছাঁচ থেকে সোনা বের করে সরিয়ে রাখা হয় একপাশে। ধীরে ধীরে লাল থেকে হলুদ, হলুদ থেকে সোনালি, ফুটে ওঠে মূল্যবান এই ধাতুর আসল চেহারা।

এবার দেশবিদেশে রপ্তানি হওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত খনি থেকে আহরিত সেই সোনা। বছরে প্রায় ১১ টনের মতো সোনা উৎপাদন করে কঙ্গো, কিন্তু এর বেশিরভাগই অবৈধভাবে দেশের বাইরে চলে যায়। সরকারি হিসেবে ২০১৫ সালে মাত্র ২৫৪ কেজি সোনা রপ্তানি করেছে ডিআরসি। সূত্র: ডিডাব্লিউ

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই